নরসিংদীর কোভিড ডেডিকেটেড ৮০ শয্যা জেলা হাসপাতালে রোগীর উপচে পড়া ভিড়। এ অবস্থায় নতুন রোগী ভর্তি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ১১৯ জন রোগী ভর্তি থাকায় সোমবার বিকেল থেকেই হাসপাতালটির দেয়ালে দেয়ালে এ–সংক্রান্ত ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তি’ সাঁটিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নতুন রোগী ভর্তি বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালটির আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) এ এন এম মিজানুর রহমান এর সত্যতা নিশ্চিত করেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ৮০ শয্যার এই কোভিড হাসপাতালে শতাধিক রোগীর চিকিৎসাসেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। সোমবার হাসপাতালটিতে মোট ১১৯ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। তাঁদের মধ্যে পাঁচজনকে শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে ছাড়া (রিলিজ) পেয়েছেন আরও পাঁচজন। মঙ্গলবার ভর্তি রয়েছেন ১০৯ জন। তাঁদের মধ্যে ৭৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে এবং ৩৫ জন উপসর্গ নিয়ে ভর্তি আছেন। তারপরও মানবিক কারণে মঙ্গলবার সংকটাপন্ন আরও পাঁচজনকে ভর্তি নেওয়া হয়েছে। খুব খারাপ পরিস্থিতি নিয়ে আসা রোগীদের জন্য দু–একটি শয্যা খালি রাখতে চাইলেও সম্ভব হচ্ছে না।
হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালটিতে বর্তমানে চিকিৎসক আছেন ৩৪ জন। নার্স আছেন ৮০ জন। এই জনবল ৭০ জন রোগীর জন্য ঠিক আছে বলা যায়। তবে যে হারে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তাতে চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা আনুপাতিক হারে বাড়ানো দরকার। হাসপাতালটিতে করোনায় আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। বেসরকারি উদ্যোগে ম্যানুয়াল সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাই ব্যবস্থার আওতায় ৫০টি পয়েন্টের মাধ্যমে গুরুতর করোনা রোগীদের অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। ৫টি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা থাকলেও কার্যকর রয়েছে মাত্র দুটি। অক্সিজেনের ব্যবহার বেশি হওয়ায় এই দুটিও আপাতত ব্যবহার করা হচ্ছে না।
হাসপাতালটির আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) এ এন এম মিজানুর রহমান বলেন, করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে অনেকেই হাসপাতালটিতে ভর্তি হতে আসছেন। শয্যা ও জনবলসংকটের কারণে এত সংখ্যক রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বর্তমানে হাসপাতালটিতে ভর্তি হওয়া রোগী উপচে পড়ছে। তাই এই মুহূর্তে নতুন রোগী ভর্তি বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কোভিড ডেডিকেটেড ৮০ শয্যা জেলা হাসপাতালটিকে ১২০ শয্যায় রূপান্তরের চেষ্টা চলছে। অন্যদিকে শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে এরই মধ্যে ১০ শয্যার কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে করোনা রোগীদের জন্য পাঁচটি করে শয্যার ব্যবস্থা আছে। এসব হাসপাতালকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, করোনা রোগী এলে ভর্তি করতে। প্রয়োজনে জরুরি ভিত্তিতে এসব হাসপাতালকে ২০ শয্যায় রূপান্তর করা হবে। এ ছাড়া নরসিংদী শহরের আরও কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
সিভিল সার্জনের কার্যালয় বলছে, বর্তমানে পুরো জেলায় অক্সিজেনের কোনো সংকট নেই। রায়পুরায় পাঁচ দিনের মধ্যে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাই সিস্টেম চালু হবে। পলাশের স্থানীয় সাংসদ দায়িত্ব নিয়েছেন, অল্প কয়েক দিনের মধ্যে সেখানে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাই সিস্টেম চালু করবেন। অন্যদিকে বেলাব-মনোহরদীতে দ্রুত সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাই সিস্টেম চালুর দায়িত্ব নিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ।
এই মুহূর্তে জেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৫৩৪। তাঁদের মধ্যে হাসপাতাল আইসোলেশনে আছেন ৭০ জন। বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন ১ হাজার ৪৬৪ জন। এ ছাড়া করোনায় আক্রান্ত হয়ে জেলায় মোট ৭০ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে নরসিংদী সদরের ৩৪, পলাশের ৬, বেলাবর ৭, রায়পুরার ৯, মনোহরদীর ৫ ও শিবপুরের ৯ জন রয়েছেন।
সিভিল সার্জন মো. নূরুল ইসলাম বলেন, ‘দুই সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন গড়ে শতাধিক ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। তবু সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে আমরা সাধ্যমতো করোনা রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’