ফেরি চলাচল বন্ধ
রোগীর ভরসা নৌ অ্যাম্বুলেন্স
তীব্র স্রোত ও পদ্মা সেতুর পিলারে ধাক্কা লাগার কারণে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। ভোগান্তিতে মুমূর্ষু রোগীর।
পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে গত ১২ দিন মাদারীপুরের বাংলাবাজার ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। সবচেয়ে বেশি অসুবিধা হচ্ছে জরুরি ও মুমূর্ষু রোগী পরিবহনে। এমন পরিস্থিতিতে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নৌ অ্যাম্বুলেন্স রোগী পরিবহনে একমাত্র ভরসা।
জাজিরার পূর্ব নাওডোবা এলাকার বাসিন্দা আজিজুল হাকিমের স্ত্রী গত শুক্রবার সন্তানের জন্ম দেন। জন্মের পর নবজাতক অসুস্থ হয়ে পড়ে। শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসকেরা নবজাতককে দ্রুত ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন। ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় ওই রাতে কীভাবে পদ্মা পাড়ি দিয়ে ঢাকা যাবেন, দুশ্চিন্তায় পড়েন স্বজনেরা। রাত ৯টার দিকে জাজিরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নৌ অ্যাম্বুলেন্সে নবজাতককে নিয়ে পদ্মা পাড়ি দেওয়া হয়।
আজিজুল হাকিম বলেন, ‘ফেরি বন্ধ থাকায় আমরা দুশ্চিন্তায় ছিলাম। তখনই নৌ অ্যাম্বুলেন্সের সন্ধান পাই। জাজিরার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আমাদের অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারের ব্যবস্থা করে দেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঢাকায় পৌঁছানোর কারণে আমার সন্তানের জীবন রক্ষা পেয়েছে।’
বিআইডব্লিউটিএ ও বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানায়, গত দুই মাসে চার দফা পদ্মা সেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কা লাগে। এই পরিপ্রেক্ষিতে পদ্মায় স্রোত বৃদ্ধি পাওয়ায় মাদারীপুরের বাংলাবাজার ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে ১৮ আগস্ট থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। স্রোতের তীব্রতা না কমা পর্যন্ত ওই নৌপথে ফেরি ছাড়া হবে না। তবে জরুরি সেবা নিশ্চিত করতে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার সাত্তার মাতবর ও মঙ্গল মাঝির ঘাট এলাকায় নতুন একটি ফেরিঘাট নির্মাণ করা হয়েছে। বুধবার রাতে সেখানে রো রো ফেরির নতুন একটি পন্টুন বসানো হয়েছে। শুক্রবার থেকে জাজিরার সাত্তার মাতবর, মঙ্গল মাঝির ঘাট-মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি চলালের কথা ছিল। কিন্তু নাব্য সংকটের কারণে ওই নৌপথে ফেরি চলাচল শুরু হয়নি।
জাজিরার ইলেকট্রনিকস পণ্যের ব্যবসায়ী আলম সরদার বলেন, তাঁর প্রতিষ্ঠানের কর্মী মজিবর রহমান গত শনিবার মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হন। চিকিৎসকেরা দ্রুত তাঁকে ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন। ফেরি বন্ধ। রাতে লঞ্চ-ট্রলার চলাচল করে না। তখন চিকিৎসকেরা নৌ অ্যাম্বুলেন্সে পদ্মা পার হওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। নৌ অ্যাম্বুলেন্স পেয়ে দ্রুততম সময়ে ঢাকা মেডিকেলে পৌঁছাতে পারেন।
জাজিরার দুর্গম চরাঞ্চলের রোগীদের পরিবহনের জন্য ২০১৯ সালের নভেম্বরে জাজিরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি নৌ অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়। এটি পদ্মা নদীর তীরে সাত্তার মাতবর-মঙ্গল মাঝির ঘাটে রাখা হয়। জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে জরুরি রোগীদের ওই ঘাটে নেওয়া হলে নৌ অ্যাম্বুলেন্সে করে পদ্মা পাড়ি দিয়ে শিমুলিয়া ঘাটে পৌঁছে দেওয়া হয়।
জাজিরা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, উপজেলার অনেক গ্রামের অবস্থান দুর্গম চরাঞ্চলে। সেখানকার মানুষের নৌপথে চলাচল করতে হয়। মানুষের জরুরি স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি উপহার দিয়েছেন। এখন ঢাকা যাওয়ার ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় জরুরি ও মুমূর্ষু অনেক রোগীকে ওই অ্যাম্বুলেন্সে করে পদ্মা পার করা হচ্ছে। তবে
নৌ অ্যাম্বুলেন্সের স্থায়ী চালক নেই। এতে সমস্যা সৃষ্টি হয়। এখন স্থানীয়ভাবে চালকের ব্যবস্থা করে নিতে হচ্ছে।