রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের কাশিয়াবাড়ী গ্রামের সড়ক তলিয়ে গেছে। সোমবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

ভারতের আসাম রাজ্য থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ও অতিবৃষ্টিতে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন ৪৯টি গ্রামের ৩৫ হাজার মানুষ। তলিয়ে গেছে ৫৯২ হেক্টর জমির ফসল। সোমবার বন্যাকবলিত এলাকা ঘুরে উপজেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়ন, রৌমারী সদর ইউনিয়ন ও শৌলমারী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। দুর্ভোগ বেড়েছে পানিবন্দী হয়ে পড়া মানুষের। তলিয়ে গেছে বিভিন্ন খেতের ফসল।

রৌমারী সদর ইউনিয়নের চরবারবান্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ের চারপাশে পানির কারণে সড়ক ডুবে আছে। ফলে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে পারছে না। এ জন্য পাঠদান বন্ধ আছে।

সোমবার সকালে সরেজমিনে যাদুরচর ইউনিয়নের পুরাতন যাদুরচর, কাশিয়াবাড়ী, লালকুড়া, বিক্রিবিল, চর লাঠিয়ালডাঙ্গা, বালিয়ামারী, শ্রীফলগাতি, খেওয়ারচর, বকবান্দা, আলগারচর; রৌমারী সদর ইউনিয়নের বাওয়াইরগ্রাম, ঝাউবাড়ি, দুবলাবাড়ি, পাটাধোয়াপাড়া, রতনপুর, বামনেরচর, কলাবাড়ি, বড়াইবাড়ি, নতুন চুলিয়ারচর এবং শৌলমারী ইউনিয়নের গয়টাপাড়া, কলমেরচর, বেহুলারচর, চরেরগ্রাম, চরবোয়ালমারীসহ বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত দেখা যায়। রৌমারীর স্থলবন্দর ও বালিয়ামারী সীমান্ত (বাংলাদেশ-ভারত) হাট পানিতে তলিয়ে গেছে।

বন্যার পানিতে ভেসে গেছে জমিতে থাকা খড় ও মাছের ঘের। তলিয়ে গেছে কৃষকের ধান, পাটসহ নানা ফসল। রৌমারী সদর ইউনিয়নের নতুন চুলিয়ারচর গ্রামের কৃষক ছক্কু মিয়া বলেন, কোনোমতে জমির ধান কাটতে পারলেও খড় শুকাতেও পারেননি, তুলতেও পারেননি।

কৃষক হাফিজুর রহমান বলেন, হঠাৎ পাহাড়ি ঢল এসে জমিতে থাকা সব খড় ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এখন গরুর খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।

যাদুরচর ইউনিয়নের ২২টি গ্রামের ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন বলেন জানিয়েছেন ইউনিয়নটির চেয়ারম্যান সরবেশ আলী। তিনি বলেন, তাঁর বন্যাকবলিত ইউনিয়নের জন্য এখনো কোনো ত্রাণ পৌঁছায়নি। দ্রুত ত্রাণের ব্যবস্থা করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে (পিআইও) জানানো হয়েছে।

রৌমারী উপজেলা পিআইও আজিজুর রহমান জানান, উপজেলার ৩৯ গ্রামের ৩৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।

বন্যায় উপজেলার ৫৯২ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাউয়ুম চৌধুরী। তাঁর ভাষ্য, আউশ ধান ১৪৭ হেক্টর, পাট ২২৩ হেক্টর, ২২২ হেক্টর শাকসবজি ও তিল পানিতে তলিয়ে গেছে।

রৌমারী উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলী মেজবাহ আলম বলেন, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে উপজেলার তিন ইউনিয়নের ৫৬ কিলোমিটার কাঁচা–পাকা সড়ক পানিতে তলিয়ে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

উপজেলার ৩৭টি বিদ্যালয় পানিবন্দী হয়ে পড়ায় সাময়িকভাবে পাঠদান বন্ধ রয়েছে বলে জানালেন রৌমারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, পানি কমে গেলে নিয়মিত পাঠদান শুরু হবে।

রৌমারী ইউএনও আশারাফুল আলম রাসেল বলেন, বরাদ্দ থেকে তিন লাখ টাকার শুকনা খাবার কেনা হয়েছে। দ্রুত এসব পানিবন্দী মানুষের মধ্যে সরবরাহ করা হবে। আরও বরাদ্দের জন্য জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে।