লক্ষ্মীপুরে প্রবাসীকে আহ্বায়ক করে আ.লীগের কমিটি, কেন্দ্রে নালিশ

লক্ষ্মীপুর জেলার মানচিত্র

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার বামনী ইউনিয়নে আবুল হাছনাত সুমন পাটোয়ারী নামের এক প্রবাসীকে আহ্বায়ক করে আওয়ামী লীগের কমিটি করা হয়েছে। আবুল হাছনাত পুরো পরিবার নিয়ে সৌদি আরবে বসবাস করেন। তবে তিনি মাঝেমধ্যে দেশে এসে কয়েক দিন থেকে যান। বর্তমানে তিনি সৌদি আরবে আছেন।

আবুল হাছনাত রায়পুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুনুর রশিদের আত্মীয়। সম্পর্কে খালাতো শ্যালক। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাংসদ নুর উদ্দিন চৌধুরীর খালাতো ভাই তিনি।

প্রবাসীকে কমিটির আহ্বায়ক করায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওই কমিটির একজন যুগ্ম আহ্বায়ক গত ২৫ মার্চ দলের কেন্দ্রীয় সভাপতির কার্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ পেয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মুঠোফোনে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিয়া গোলাম ফারুকের কাছে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

গত বছরের ২ অক্টোবর বামনী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর আগে ওই ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তাফাজ্জল হোসেন পদত্যাগ করেন। পরে আবুল হাছনাতকে আহ্বায়ক করে ২০ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয় উপজেলা আওয়ামী লীগ।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চেয়ারম্যান তাফাজ্জল হোসেন ইউনিয়ন কমিটির পদে ছিলেন। ইউপি নির্বাচনের আগে আবুল হাছনাত চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন। প্রবাসে থাকলেও জেলা ও উপজেলার নেতারা তাঁর পক্ষে অবস্থান নেন। বেকায়দায় পড়েন তাফাজ্জল হোসেন। বাধ্য হয়ে তিনি দলীয় পদ ছেড়ে দিয়ে চেয়ারম্যানের নির্বাচন করেন।

ওই লিখিত অভিযোগে বলা হয়, আবুল হাছনাত দীর্ঘ দিন ধরে পরিবারসহ সৌদি আরবে বসবাস করছেন। তিনি ব্যবসার জন্য মাঝে মধ্যে দেশে আসেন। তাঁকে নেতা বানানোর জন্য তাফাজ্জল হোসেনকে পদত্যাগ করানো হয়। জেলা ও উপজেলা কমিটির কয়েকজন নেতার সঙ্গে আত্মীয়তার কারণে তিনি সভাপতি হয়েছেন। ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে প্রবাসীকে নেতা বানানোর কারণে ক্ষুব্ধ কর্মীরা। তা ছাড়া তাঁর সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সখ্য আছে। বিএনপির সাবেক সাংসদ ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল খায়ের ভূঁইয়াসহ বিভিন্ন নেতার সঙ্গে তিনি প্রায় সময়ই বৈঠক করেন। এমন কয়েকটি ছবিও অভিযোগের সঙ্গে যুক্ত করা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই যুগ্ম আহ্বায়ক প্রথম আলোকে বলেন, তিনি দীর্ঘ দিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কিন্তু আবুল হাছনাতকে কখনো আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে দেখেননি তিনি। তাঁকে আহ্বায়ক করায় তিনি ও তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে আবুল হাছনাত সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি দীর্ঘ দিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। এখন দেশেই বেশি থাকছি। পরিবার-পরিজন সৌদি আরবে থাকায় মাঝে মধ্যে সৌদিতে যাই। আহ্বায়ক নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে একটি চক্র আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, তাফাজ্জল স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। পরে সভা করে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। প্রবাসে থাকলেও দলের মধ্যে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা আছে। আত্মীয়তার কারণে তাঁকে নেতা বানানোর অভিযোগ সঠিক নয়।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিয়া গোলাম ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিষয়টি আমার কাছে জানতে চেয়েছেন। আমরা দলীয় ফোরামে বিষয়টি আলোচনা করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।’ আত্মীয়স্বজন দিয়ে কমিটি না করার ব্যাপারে দলের সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশনা আছে বলে তিনি জানান।