লঞ্চে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি, বাড়তি ভাড়া আদায়
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাড়ি ফিরছে ঘরমুখী মানুষ। করোনার সংক্রমণ রোধে লঞ্চে গাদাগাদি করে যাত্রী বহনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। ঢাকা নদীবন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়া বেশির ভাগ লঞ্চেই শারীরিক দূরত্ব মানা হয়নি। এ ছাড়া যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শনিবার বিকেলে ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, টার্মিনাল এলাকায় বেশির ভাগ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। কাউকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করতে দেখা যায়নি। লঞ্চের ডেকে বসা বেশির ভাগ যাত্রীর মুখে মাস্ক ছিল না। কারও কারও মাস্ক ছিল থুতনিতে। যাত্রীরা স্বাস্থ্যবিধি না মেনে একে অপরের গা ঘেঁষে লঞ্চের ডেকে বসে আছেন। বেশির ভাগ লঞ্চে ঢোকার পথে জীবাণুনাশক ছিটাতে দেখা যায়নি। কিছু কিছু লঞ্চের প্রবেশমুখে জীবাণুনাশক টানেল থাকলেও সেগুলো অকেজো।
ঢাকা নদীবন্দর সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত লঞ্চ ছেড়ে গেছে ৪৭টি এবং দক্ষিণাঞ্চল থেকে টার্মিনালে এসেছে ৬৫টি।
সুন্দরবন লঞ্চের পরিচালক মো. ঝন্টু বলেন, ‘আমরা সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে লঞ্চ ছাড়ব। যাত্রীদের মাস্ক পরার জন্য বারবার মাইকিং করে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু যাত্রীরা কোনো কথাই মানছেন না। যাত্রীরা নিজেরাই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। এরপরও আমরা বিভিন্নভাবে তাঁদের সচেতন করার চেষ্টা করছি।’
আমতলী রুটে সুন্দরবন লঞ্চের যাত্রী সোহাগ হোসেন বলেন, ‘বেলা দুইটার দিকে লঞ্চে এসে দেখি লোকজন একে অপরের গা ঘেঁষে ডেকে বসে আছে। কেউ সামাজিক দূরত্ব মানছেন না। এমনকি বেশির ভাগ যাত্রীর মুখে মাস্কও ছিল না। তাদের দূরে দূরে বসার জন্য অনুরোধ করা হলেও উল্টো তারা আমাকে হেনস্তা করেছে। বিষয়টি লঞ্চের লোকজনকে জানালে তাঁরা এসে মিটমাট করে দেন।’
এমভি পারাবত লঞ্চের যাত্রী কুদরত আলী বলেন, ‘প্রায় দুই মাস আগে বরিশাল থেকে ডাবল কেবিনের ভাড়া নিয়েছিল ১ হাজার ৮০০ টাকা। এখন সেই কেবিনের ভাড়া চাচ্ছে চার হাজার টাকা। বাধ্য হয়ে মাস্টার কেবিন ভাড়া নিয়েছি ২ হাজার ৭০০ টাকায়।’ তিনি আরও বলেন, যাত্রীদের জিম্মি করে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা ঠিক নয়। সরকারের এসব বিষয় দেখা উচিত।
অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাপ) সংস্থার সদস্য ও প্রিন্স আওলাদ লঞ্চের মালিক আওলাদ হোসেন বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চ চলাচল করছে। তবে শনিবার টার্মিনালে যাত্রীদের চাপ কম ছিল। আগামী দু-এক দিনে যাত্রীদের চাপ বাড়তে পারে। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় লঞ্চে ঢোকার সময় যাত্রীদের জীবণুনাশক দেওয়া হচ্ছে এবং থার্মাল মেশিন দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এ ছাড়া সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ডেকে বসার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, লঞ্চে অতিরিক্ত ভাড়া ও অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়ার অভিযোগটি সঠিক নয়। সরকার নির্ধারিত ভাড়াই আদায় করা হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শোভন রাংসা জানান, ঈদে নদীপথে ঘরমুখী যাত্রীদের যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হতে হয়, সে জন্য সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও অতিরিক্ত যাত্রী বহন রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিএর নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘যাত্রীদের মাস্ক পরার বিষয়ে তাগিদ দিতে টার্মিনাল এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। কিন্তু যাত্রীরা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। এ ছাড়া লঞ্চে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’