লামায় মন্দির ও পূজামণ্ডপে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪
বান্দরবানের লামায় কেন্দ্রীয় হরিমন্দির, মন্দিরের পূজামণ্ডপে হামলা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে লুটপাটের ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার তিন দিন পর গতকাল রোববার রাতে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ আজ সোমবার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
লামা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আলমগীর হোসেন বলেন, রোববার রাতে উপপরিদর্শক (এসআই) আশ্রাফ হোসেন বাদী হয়ে একটি এবং মন্দির কমিটির পক্ষ আরেকটি মামলা করে। পুলিশের মামলায় ৪৮ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতপরিচয় দুই শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মো. কাওশের আলম, আল আমিন, নিজাম উদ্দিন ও মো. খালেক। তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
লামা কেন্দ্রীয় হরিমন্দির ও পূজা উদ্যাপন কমিটির নেতারা জানান, হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় মামলা করার পর তাঁরা নিরাপত্তা শঙ্কায় রয়েছেন। বিষয়টি পুলিশকে জানালেও নিরাপত্তার জন্য কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে পুলিশ জানিয়েছে, পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ।
পুলিশের মামলায় ৪৮ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতপরিচয় দুই শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে
কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন অবমাননার প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার লামা উপজেলা পরিষদের সামনে তৌহিদী জনতা সমাবেশ করে। সমাবেশ শেষে মিছিল থেকে কেন্দ্রীয় হরিমন্দির, পূজামণ্ডপে হামলা ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে লুটপাট করা হয়।
লামা কেন্দ্রীয় হরিমন্দির ও পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি প্রশান্ত ভট্টাচার্য বলেন, তাঁরা ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারী ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে লুটপাটকারীদের শনাক্ত করেছেন। ফুটেজ দেখে আপাতত ৯৪ জনের নাম ও ঠিকানা চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। ওই ৯৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ২০০ থেকে ২৫০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির নামে মন্দির কমিটির সভাপতি হিসেবে তিনি বাদী হয়ে মামলা করেছেন। প্রশান্ত ভট্টাচার্য বলেন, মামলা করার পর পরোক্ষভাবে তাঁকে ও মন্দির কমিটির নেতাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য তাঁরা নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছেন। বিষয়টি তাঁরা প্রশাসন ও পুলিশকে জানিয়েছেন।
পুলিশের দায়ের করার মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে লামা উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ শাহীনকে। তিনি দাবি করেন, তৌহিদী জনতার সমাবেশ ও মিছিলে তিনি যাননি। সমাবেশে আওয়ামী লীগ নেতারা বক্তব্য দিয়েছেন এবং মিছিলেও ছিলেন। কিন্তু মামলার আসামিরা অধিকাংশই বিএনপির নেতা-কর্মী।
জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও লামা পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম বলেন, ইমামদের আয়োজিত সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি উপস্থিত থেকে বক্তব্য রেখেছেন। সমাবেশ শান্তিপূর্ণ ছিল। মিছিল করার কথা ছিল না। কিন্তু সমাবেশে উগ্রবাদীরা ঢুকে মিছিল বের করে। তারা মন্দিরে হামলা ও দোকানপাটে লুটপাট করেছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে হামলা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেও পারেননি।
বান্দরবানের পুলিশ সুপার জেরিন আখতার বলেন, লামায় অপ্রীতিকর ঘটনার পর পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক হয়েছে। পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করলেও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরাও মামলা করতে পারবেন। মন্দির কমিটিসহ সবার নিরাপত্তার ব্যাপারে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।