লালমোহনে ৫ মাস ধরে নামজারি বন্ধ, ভোগান্তি

  • গত মে মাস থেকে নামজারি বন্ধ আছে। এতে সাবরেজিস্ট্রার অফিসেও দলিল হচ্ছে না।

  • নামজারি না হওয়ায় ৩ হাজার দলিল আটকে আছে। অনেকে হেবা দলিল করছেন।

  • লালমোহনে পাঁচ শতাধিক নামজারির আবেদন জমা।

ভোলার লালমোহন উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে মে মাস থেকে নামজারি হচ্ছে না। এতে উপজেলার সাবরেজিস্ট্রার অফিসে দলিল হচ্ছে না। বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রাহকেরা ভূমি অফিসে এসে সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। অনেকে বাধ্য হয়ে হেবা (দান) জাতীয় দলিল করছেন। এতে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

দলিল লেখকদের দাবি, নামজারি না হওয়ায় তিন হাজার দলিল আটকে আছে। সাফ-কবলা দলিল করতে জমা-খারিজ ও নামজারি দরকার হয়। আর সরকার আপন আত্মীয়দের জন্য হেবা (দান) দলিলের সুযোগ রেখেছে। মানুষ জমা-খারিজ, নামজারি উত্তোলন করতে না পেরে হেবা দলিলের মাধ্যমে জমি ক্রয়-বিক্রি করছেন।

ভোলার সাতটি সহকারী ভূমি কমিশনারের কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সদরে ১৫৫, বোরহানউদ্দিনে ১২০, দৌলতখানে ২০-২২, তজুমদ্দিনে ২০-২৫, চরফ্যাশন ও মনপুরায় ৫০টির মতো এবং লালমোহনে পাঁচ শতাধিক নামজারির আবেদন জমা পড়েছে। ছয় উপজেলাতে নামজারির কাজ চলমান থাকলেও গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শুধু লালমোহনে নামজারির কাজ শুরু হয়নি।

কয়েকজন আবেদনকারী জানান, তাঁরা নামজারির আবেদন করে মাসের পর মাস অপেক্ষা করছেন। মাঝেমধ্যেই ভূমি কার্যালয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সেবা না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। তাঁরা দূরদূরান্ত থেকে সকালে ভূমি অফিসে যান, সেবা পাওয়ার অপেক্ষা করেন, কিন্তু বিকেলে কার্যালয় বন্ধ হয়ে গেলেও তাঁদের সেবা মেলে না।

ভুক্তভোগীদের কয়েকজন জানান, সরকার মানুষের সুবিধার জন্য ইন্টারনেটে আবেদন করতে বলেছে। কিন্তু সেখানে বেশি ভোগান্তি তৈরি হয়। গ্রামের অনেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন না। যেতে হয় ভূমি কার্যালয় বা দলিল লেখকদের কাছে। তাঁদের টাকা দিলেও যথাসময়ে আবেদন করা যায় না। নামজারি করার আবেদনের আগে জমির আদ্যোপান্ত তথ্য দরকার হয়। ১০ থেকে ১২ দিন এক অফিস থেকে আরেক অফিসে ঘুরে কাগজপত্র জোগাড় করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে আবেদন ফরম পূরণ করেন। কিন্তু অনেক সময় সাবমিট (জমা) করতে গেলে দেখা যায়, ইন্টারনেট দুর্বল বা সার্ভার ডাউন। তখন তাঁদের আবেদন না করেই বাড়ি ফিরতে হয়। এত কষ্ট করে আবেদন করা গেলেও নামজারি না হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

লালমোহন উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি সামসুদ্দিন পাটওয়ারী বলেন, ভূমি কার্যালয়ে নামজারি না হওয়ায় ৫ হাজার দলিল সম্পূর্ণ হয়নি। তাঁদের সমিতির সদস্যসংখ্যা ৮৭। তাঁদের কাছে প্রায় ৩ হাজার দলিল আটকে আছে।

উপজেলার পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. হাসান বলেন, নিজের ফুফুর কাছে থেকে ৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ জমি কিনেছেন। নামজারি করতে না পারায় সাফ-কবলার পরিবর্তে দানপত্র (হেবা) দলিল করেছেন। এ দলিল করতে তাঁকে ৯ হাজারের বেশি টাকা খরচ করতে হয়েছে। লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের আবদুর রহিম বলেন, তিনি লর্ডহার্ডিঞ্জ মৌজার আড়াই গন্ডা জমি কেফায়েতউল্যাহর কাছে থেকে কিনেছেন। নামজারি না হওয়ায় হেবা বিল দলিল করতে তার খরচ হয়েছে ১৩ হাজার টাকা।

লালমোহনের ইউএনও মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, সাবেক ইউএনও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) দায়িত্বে থেকে নামজারিতে স্বাক্ষর করেননি। তবে তিনি কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে নামজারি চালু করার চেষ্টা করবেন।