খোঁজ নিয়ে জানা গেল, নাটকটির সফল মঞ্চায়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন প্রদ্যুৎ পাল। কথা প্রসঙ্গে বললেন, নাটকটি নিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যে উৎসাহ তৈরি করতেই দৌড়াদৌড়ি করছেন। এলাকার মানুষকে ছোট যমুনা নদীর বাঁধে ডেকে নিয়ে এতক্ষণ কথা বলছিলেন। সারা দিন দৌড়ের ওপরই আছেন। স্থানীয় স্কুলগুলো থেকে চেয়ার–টেবিল আনতে হবে। কাকে ডাকতে হবে, কোথায় বসাতে হবে—এসব নিয়ে তাঁর ভাবনার অন্ত নেই। তারপর আবার তাঁকেই নাটকের মূল চরিত্রে অভিনয় করতে হবে।
প্রদ্যুৎ পাল তিন মেয়ের বাবা। গ্রামে নিজের জমিজিরাত আর ছোট্ট সংসার নিয়ে চলে যায় তাঁর দিন। গণকবরের পাশে দাঁড়িয়েই তিনি শোনালেন সেদিনের সেই ভয়াবহ কাহিনি। বললেন, তাঁর স্পষ্ট মনে আছে, পাকিস্তানি সেনারা এসে ওয়্যারলেস সেটে কিছু বলাবলি করলেন। অপর প্রান্ত থেকে জবাব এলো, ‘সব আদমি কো খতম করদো।’
তারপর গর্জে ওঠে হানাদারদের মেশিনগান। সৌভাগ্যবশত প্রদ্যুৎ পালের শরীরে গুলি লাগেনি। কিন্তু লাশের স্তূপ থেকে যখন উঠলেন, তখন দেখলেন, বাবা সুরেশ্বর পাল, বড় ভাই সুশান্ত কুমার পাল, মেজ ভাই প্রশান্ত কুমার পাল, ছোট ভাই বিদ্যুৎ কুমার পাল ও কাকা লঙ্কেশ্বর পালের লাশ পড়ে আছে। মেজ ভাই ওয়াবদার প্রকৌশলী ছিলেন। ছোট ভাই রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র ছিলেন।
এ পর্যন্ত বলে তিনি থামলেন। বললেন, ‘এ গল্প বলা যায় না।’ তাঁর এক কাকা আর গ্রামের কয়েকজন মিলে বাড়ির পাশেই একটি গর্ত খুঁড়ে লাশগুলোকে মাটিচাপা দিয়েছিলেন। ১৯৯৮ সালে ৫০ ব্যাগ সিমেন্টের ব্যবস্থা করতে পেরেছিলেন। তাঁর এক আত্মীয়ের ইটভাটা থেকে ইট এনে গণকবরের জায়গাটায় প্রাচীর করে দেন। আর একটি পাথর জোগাড় করে তাতে এই নামগুলো খোদাই করে নেন। শুরু থেকেই শহীদ পরিবারের স্বীকৃতির জন্য তিনি নানা জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করেছেন, বলে জানালেন প্রদ্যুৎ পাল।
তাঁর বয়স এখন ৭১। আজও সেই দৌড় থামেনি। শহীদদের স্বীকৃতি মেলেনি ৫১ বছরেও। শুধু দৌড়েই গেলেন। এখন ‘পরিবেশ থিয়েটার’ হবে। সেই জন্য আবার দৌড়াচ্ছেন। ‘এই আয়োজনের কোনো অমর্যাদা হলে আমি শহীদদের আত্মার কাছে জবাব দিতে পারব না,’ এক বুক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন প্রদ্যুৎ পাল।