রকিবুল হাসান

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে নৌকার প্রার্থী রকিবুল হাসান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছেন। আর কেউ মনোনয়নপত্র দাখিল না করায় গত সোমবার বিকেলে তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী ঘোষণা করেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আশ্ররাফুল আলম।

রকিবুল হাসান উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তিনি প্রথমবারের মতো উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হলেন। একই সঙ্গে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রথমবারের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পাওয়া জনপ্রতিনিধি।

রাজনৈতিকভাবে আলোচনায় থাকা বাজিতপুর উপজেলা পরিষদের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্বাচনে লড়াই ছাড়া ফলাফল নির্ধারণ হওয়ার ইস্যুটি এখন মানুষের মুখে মুখে। নৌকার সঙ্গে কেন আর কেউ প্রার্থী হতে এলেন না বা ভোট হলেই-বা ফলাফল কী হতে পারত, ক্ষমতাসীনের একক জয় পাওয়ার পর স্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে এখন এসব আলোচনা গুরুত্ব পাচ্ছে।

রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের ধারণা, বাজিতপুরে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ছাড়া অন্য কোনো প্রতীকের প্রার্থীর বিগত দিনের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা ভালো নয়। ভোটের আগে ও পরে মামলা-হামলা অবধারিত আর ফলাফল হয় একপেশে। সাধারণ ভোটার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে, বিশেষ করে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের মনে এমন ধারণা এখন বদ্ধমূল হয়ে গেছে। মূলত, ওই বিশ্বাস থেকে নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে লড়াই করার সাহস হারান অন্যরা।
লক্ষ করা গেছে, উপনির্বাচন নিয়ে শুরু থেকেই দল হিসেবে বিএনপির কোনো আগ্রহ ছিল না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘প্রথমত, আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত, এই সরকারের অধীন আর কোনো নির্বাচনে নেই। আর বাজিতপুরের অভিজ্ঞতা আরও কঠিন। এখানে বিএনপি পরিচয়ে কোনো ব্যক্তি ভোটকেন্দ্রে যাবেন, এমন পরিবেশ রাখা হয়নি। উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী না পাওয়া বাজিতপুরের সার্বিক নির্বাচনী বৈরী পরিবেশের স্পষ্ট ইঙ্গিত।’

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, উপনির্বাচন হওয়ার আগে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন ছারওয়ার আলম। তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে টানা দুবারের চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর বাবা মেজবাহ উদ্দিন ছিলেন পৌরসভার তিনবারের চেয়ারম্যান। মেজবাহ সভাপতি পদে থেকে দীর্ঘদিন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন। মূলত, বাবার রাজনৈতিক পরিচয়ের সূত্র ধরে ছারওয়ারের জনপ্রতিনিধি হওয়া। তিনি চলতি বছরের ৮ মে মারা যান। এরপর নির্বাচন কমিশন ৭ অক্টোবর শূন্য পদটিতে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে।

নৌকা প্রতীক পেতে ছারওয়ার আলমের পরিবারের ৩ জনসহ মোট ১০ জন দলের কাছে আবেদন করেন। শেষে দল রকিবুলের ওপর আস্থা রাখেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজিতপুরের দলীয় রাজনীতি মূলত এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন সাংসদ মো. আফজাল হোসেন। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। বাজিতপুরে সব ধরনের নির্বাচনে সাংসদের অনুগত ছাড়া আর কেউ দলীয় সমর্থন পাওয়ার নজির নেই। সাংসদের অনুগত হয়ে ভোটে যেতে পারলে জয় নিশ্চিত। তবে এক বছর আগেও রকিবুলের সঙ্গে সাংসদের সম্পর্ক ভালো ছিল না। কয়েক মাস আগ থেকে রকিবুল ধীরে ধীরে সাংসদের আস্থা অর্জন করতে থাকেন। রকিবুল সমর্থন পাওয়ার পর বাকি ৯ মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে ছারওয়ার আলমের পরিবারের সদস্যদের। সবাই ভেতরে–ভেতরে দগ্ধ হলেও তাঁদের কারও ক্ষোভ প্রকাশ্যে আসেনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মনোনয়নবঞ্চিত ব্যক্তিদের একজন বলেন, ‘বাজিতপুরে নৌকার মনোনয়ন মূলত সাংসদের ইচ্ছাতেই হয়। সব মিলিয়ে একবার মনে হয়েছিল, স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থেকে যাই।’ কারণ, তাঁর ধারণা ছিল, তিনি জয় পাবেন। শেষে ওই ভাবনা থেকে নিজেকে সরিয়ে আনেন। কারণ, সুষ্ঠু ভোট হলে তবে তিনি জয় পাবেন। কিন্তু সুষ্ঠু ভোট হওয়ার সম্ভাবনা দেখতে না পাওয়ায় ভাবনায় পরিবর্তন আনা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না তাঁর।

তবে রকিবুলের বিশ্বাস, ভোট না হওয়ায় ফল যা হয়েছে, ভোট হলেও ফলাফল তা–ই হতো। কারণ, ভোটাররা তাঁকে গ্রহণ করতেন। জয় পাওয়ার পর রকিবুল গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে এমনই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন।

সাংসদ মো. আফজাল হোসেন বলেন, ‘প্রথমত, আমার দলের আর কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না, এটাই স্বাভাবিক। এখন অন্যরা কেন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এলেন না, সেটা তাঁরা ভালো বলতে পারবেন।’

বিএনপি নেতার ভাষ্য সামনে আনলে সাংসদ বলেন, ‘অতীতে জনগণ বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ভবিষ্যতে করবেন, এই সত্য দলটির সব নেতা-কর্মী বুঝে গেছেন। ভোটে সুবিধা করতে পারবেন না বলেই আমাদের ওপর দায় চাপাচ্ছেন।’
সাংসদ মো. আফজাল হোসেনের অনুগত না হলে দলীয় প্রতীক পাওয়ার সুযোগ নেই, দলীয় সমর্থনবঞ্চিত কয়েকজনের এমন ধারণার বিষয়ে তাঁর ভাষ্য, মনোনয়নবঞ্চিত হলে নেতা-কর্মীরা কষ্ট পান। আর কষ্ট থেকেই মুখ থেকে কিছু ভুল কথা বের হয়ে আসে।