শরীয়তপুরে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের বিরোধে নেতা খুন

শরীয়তপুরে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের বিরোধে আবদুল কুদ্দুস ব্যাপারী (৮০) নামের এক নেতা খুন হয়েছেন। সদর হাসপাতাল প্রাঙ্গণে তাঁর স্বজনদের আহাজারি
ছবি: প্রথম আলো

শরীয়তপুর সদর উপজেলার চিতলিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধের জেরে আবদুল কুদ্দুস ব্যাপারী (৮০) নামের এক আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঈদের নামাজ পড়ে তাঁর ওপর হামলা চালানো হয়। কুদ্দুস ব্যাপারী চিতলিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।

সদরের পালং মডেল থানা সূত্রে জানা গেছে, জেলা শহরের পাশেই চিতলিয়া ইউনিয়ন। ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বর্তমান চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুস সালাম হাওলাদার এবং সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হারুন অর রশিদ হাওলাদারের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার ও ইউপি নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘ দিনের বিরোধ চলছিল। ওই বিরোধের জেরে হারুন অর রশিদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।

এলাকার বাসিন্দা ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ সকালে হারুন অর রশিদের সমর্থক ইমাম হোসেনের সঙ্গে আবদুস সালাম হাওলাদারের সমর্থক সৈয়দ সরদারের মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়। ইমাম হোসেন ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁদের সমর্থকদের খবর দেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার মজুমদার কান্দি এলাকায় ঈদের নামাজ পড়ে ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি কুদ্দুস ব্যাপারী, সৈয়দ সরদার ও জয়নাল ব্যাপারী বাড়ি ফিরছিলেন। তখন ইমাম হোসেন লোকজন নিয়ে তাঁদের ওপর হামলা চালান। এ সময় ওই তিনজনকে কুপিয়ে আহত করা হয়। এ ঘটনার পরপরই উভয় পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়ান। ওই তিন ব্যক্তি ছাড়া সংঘর্ষে দুই পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে বেলা একটার দিকে কুদ্দুস ব্যাপারী মারা যান।

এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মজুমদার কান্দি গ্রাম থেকে পাঁচ ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ। কুদ্দুস ব্যাপারীর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।

কুদ্দুস ব্যাপারীর মেয়ে রেহানা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, বাড়ির পাশের মজুমদার কান্দি জামে মসজিদে ঈদের নামাজ পড়ে বাড়িতে ফিরছিলেন বাবা। পরিবারের সবার সঙ্গে সকালের নাশতা করার কথা ছিল তাঁর। বাড়িতে ফেরার পথে তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

রেহানা আক্তার আরও বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগ পরিবারের মানুষ। বাবা বঙ্গবন্ধুর সময় থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। আজ আওয়ামী লীগের নামধারীদের হাতেই তাঁর প্রাণ গেল। আওয়ামী লীগ নেতা হারুন হাওলাদারের ইন্ধনে আমার বাবাকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’

ঘটনার পর থেকে ইমাম হোসেন পলাতক। তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও বন্ধ পাওয়া গেছে। আর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হারুন অর রশিদের মুঠোফোনে ফোন করলেও তিনি ধরেননি। খুদেবার্তা পাঠিয়ে বিষয়টি জানতে চাইলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।

চিতলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুস সালাম হাওলাদার বলেন, ‘স্থগিত হওয়া চিতলিয়া ইউপির নির্বাচন সামনে। ওই নির্বাচনে আমি যাতে নির্বিঘ্ন অংশ নিতে না পারি, সে জন্য হারুন হাওলাদার আমার ভাই ও সমর্থকদের ওপর হামলা করেছেন। আমার ইউনিয়নের এক আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যা করেছেন।’

পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আক্তার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের বিরোধের কারণে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুরো ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। এখনো মামলা হয়নি। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।