শরীয়তপুরে যুবলীগের সংঘর্ষ ও মহড়ার ঘটনায় আটক নেই, হয়নি মামলাও
শরীয়তপুর জেলা যুবলীগের বর্ধিত সভাকে কেন্দ্র করে গতকাল মঙ্গলবার সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। পুলিশের উপস্থিতিতে যুবলীগের কর্মী-সমর্থকেরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া ও সংঘর্ষে অংশ নিলেও কাউকে আটক করা হয়নি। এখনো থানায় কোনো মামলা না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকেরা।
জেলা যুবলীগ ও পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০৫ সালে শরীয়তপুর জেলা যুবলীগের সম্মেলন করা হয়েছিল। দীর্ঘ ১৬ বছরেও আর নতুন কমিটি করা হয়নি। সংগঠনে গতিশীলতা আনতে গতকাল জেলা যুবলীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভা ঘিরে যুবলীগের নতুন কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীরা নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করতে কর্মীদের জড়ো করেন। পরে শহরের পাঁচটি স্থানে দুই পক্ষর সমর্থকদের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে পথচারীসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
বিবদমান একপক্ষের নেতৃত্ব দিয়েছেন সাংসদ ইকবাল হোসেনের সমর্থক পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাচ্চু ব্যাপারী ও সাংসদের চাচাতো ভাই সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি বিল্লাল হোসেন। আরেক পক্ষের নেতৃত্ব দেন পৌর মেয়র পারভেজ রহমান ও সাবেক সাংসদ বি এম মোজাম্মেল হকের সমর্থক জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিক পাহাড়। তাঁরা যুবলীগের নতুন কমিটিতে সভাপতি হওয়ার জন্য তৎপরতা শুরু করেছেন।
নতুন কমিটিতে পদপ্রত্যাশী পারভেজ রহমান, সিদ্দিক পাহাড় ও সাখাওয়াৎ হাওলাদার তাঁদের সমর্থকদের নিয়ে বর্ধিত সভায় আসতে চাইলে তাঁদের বাধা দেন বাচ্চু ব্যাপারী ও বিল্লাল হোসেনের সমর্থকেরা। তাঁদের সমর্থকেরা সারা শহরে দেশীয় অস্ত্র, রামদা, ছেনদা, ঢাল-কাতরা, টেঁটা ও বল্লম নিয়ে মহড়া দেন। শহরে দুই শতাধিক ককটেল বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
গতকালের সংঘর্ষের ঘটনার বিভিন্ন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা গেছে, বাচ্চু ব্যাপারী তাঁর সমর্থকদের নিয়ে বাসস্ট্যান্ড এলাকা, পালং উত্তর বাজার এলাকায় মহড়া দিচ্ছেন, প্রতিপক্ষকে ধাওয়া করছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নড়িয়া-সদর সার্কেল) মিজানুর রহমান ও পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন পুলিশ নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁদের সামনেই দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া ও সংঘর্ষে অংশ নেন যুবলীগের কর্মী-সমর্থকেরা। কিন্তু গত ২৪ ঘণ্টায় কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
আজ বুধবার বাচ্চু ব্যাপারী ও বিল্লাল হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁরা কল ধরেননি। গতকাল বিল্লাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুবলীগের বর্ধিত সভাকে কেন্দ্র করে একটি মহল অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। সাংসদের পক্ষে আমাদের কর্মীরা তা প্রতিহত করার জন্য শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়েছিলেন। তবে আমাদের কেউ সংঘর্ষে জড়াননি।’
সভা ঘিরে যুবলীগের নতুন কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীরা নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করতে কর্মীদের জড়ো করেন। পরে কয়েক দফা সংঘর্ষে পথচারীসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
পৌর মেয়র পারভেজ রহমান বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর যুবলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমে অংশ নিতে কেন্দ্রীয় নেতারা শরীয়তপুরে এসেছিলেন। কর্মী-সমর্থকেরা তাঁদের শুভেচ্ছা জানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু একটি পক্ষ অনুষ্ঠানে যেতে বাধা সৃষ্টি করেছে। পুলিশের উপস্থিতিতে তারা অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিল, আওয়ামী লীগের নিবেদিত কর্মীদের মারধর করল। অথচ পুলিশ তাদের আটক পর্যন্ত করল না। এমন ঘটনায় আমরা মর্মাহত, আতঙ্কিত।’
এ ব্যাপারে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বর্ধিত সভায় যাঁরা শক্তি প্রদর্শন করতে চেয়েছিলেন, তাঁদের বিষয়ে কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ নেতাদের কাছে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। আর যাঁরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেন, তাঁদের জায়গা যুবলীগে হবে না।
শরীয়তপুর সদরের পালং মডেল থানার ওসি আক্তার হোসেন বলেন, সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। পুলিশের সামনে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়ার পরও তাঁদের কেন আটক করা হয়নি, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দলীয় ঘটনা। কার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেব? আর আটক করলে একটি পক্ষের লোকজন আরও মারামারি-কাটাকাটি করত।’
বিষয়টি জানতে চাইলে পুলিশ সুপার এস এম আশরাফুজ্জামান বলেন, যাঁরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়েছেন, তাঁদের আটকের জন্য পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।