শিমুলিয়ায় ফেরিতে গাড়ির, লঞ্চঘাটে যাত্রীর চাপ
পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। এ কারণে ঘরমুখী যাত্রী ও যানবাহনের চাপ কয়েক গুণ বেড়েছে দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার শিমুলিয়া ঘাটে। ফেরিঘাট এলাকায় পারাপারের অপেক্ষায় যানবাহনের দীর্ঘ সারি। যাত্রীদের গাদাগাদি ছিল লঞ্চঘাটে।
শিমুলিয়া ঘাট ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আর কয়েক দিন পর ঈদুল আজহা। তাই দুদিন ধরে এ ঘাট দিয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। এ কারণে দুদিন ধরে ঘাটে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ লেগে আছে। স্পিডবোট চলাচল বন্ধ। আজ শনিবার সকাল থেকে ঘাটে আসা অধিকাংশ যাত্রী লঞ্চে করেই পদ্মা পাড়ি দিচ্ছে। ফেরিতে গত ঈদের মতো যাত্রীর চাপ নেই। তবে যানবাহনের চাপ আছে।
এদিকে গতকাল শুক্রবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, শিমুলিয়া-ভাঙ্গা মোড় দিয়ে যাত্রী ও পরিবহনগুলো ঘাটের দিকে ছুটছে। এ মোড়ে পুলিশ অতিরিক্ত যাত্রীবাহী যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করছে। অনেক যাত্রী হেঁটেই ঘাটের দিকে যাচ্ছে। ঘাটে প্রবেশ করতেই দেখা গেল ফেরিঘাটের প্রতিটি সংযোগ সড়কেই যানবাহনের সারি। এর মধ্যে ট্রাকের সংখ্যাই বেশি। পার্কিং ইয়ার্ড ও মাওয়া নৌ–পুলিশ মাঠেও রয়েছে গাড়ি। ফেরিঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় ব্যক্তিগত গাড়ি, পরিবহন ও মালবাহী ট্রাক।
শিমুলিয়া ফেরিঘাটের বিআইডব্লিটিসির উপমহাব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর বিধিনিষেধ শেষ হয়েছে। গতকালের মতো আজও ঘাটে যানবাহনের চাপ আছে। ছোট গাড়ি, যাত্রীবাহী বাস, মালবাহী যানবাহনসহ সাড়ে তিন শতাধিক যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় আছে। যাত্রীরা লঞ্চে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছে। ঘাটে ছোট-বড় ১৩টি ফেরি চলাচল করছে। আজ আরও একটি ফেরি বাড়ানো হবে। ঈদের আগে আরও দুটি ফেরি বাড়তে পারে। ঘাটের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে।
গোপালগঞ্জগামী প্রাইভেট কারের যাত্রী সাব্বির হোসেন জানান, গ্রামের বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ করতে যাচ্ছেন। তিনি ভোর থেকে ফেরিতে ওঠার অপেক্ষায় আছেন।
খুলনার ডুমুরিয়া এলাকার সমাপ্তি জয় নামে মাইক্রোবাসের এক যাত্রী বলেন, ভোর থেকে ঘাটে অপেক্ষমাণ। দীর্ঘ লাইনে আছেন তিনি।
এদিন লঞ্চঘাটে দেখা যায় যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। মাদারীপুর থেকে লঞ্চ এলে সেখানে তড়িঘড়ি করে ওঠার চেষ্টা করছে যাত্রীরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা স্বাস্থ্যবিধি মানানোর চেষ্টা করলেও যাত্রীরা মানছিল না।
তিন নম্বর লঞ্চঘাট এলাকায় রুবেল পাইক নামের এক যাত্রী বলেন, তিনি রাজধানীর রামপুরা থেকে এসেছেন। বরিশালে যাবেন। ঘাটে চাপ আছে। গরমে কষ্টও হচ্ছে। তবে পরিবহন, লঞ্চ ও ফেরি চলাচল স্বাভাবিক থাকায় ভোগান্তি কমেছে।
আমাদের মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, সকাল থেকে এই নৌপথে চলাচলরত প্রতিটি লঞ্চ শিমুলিয়া থেকে যাত্রী বোঝাই করে বাংলাবাজার লঞ্চঘাটে আসছে। এসব লঞ্চে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো প্রবণতা নেই। এ কারণে করোনার সংক্রমণ আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সকাল ১০টায় বাংলাবাজার লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখা যায়, শিমুলিয়া লঞ্চঘাট থেকে আসা ছোট লঞ্চগুলো থেকে বাংলাবাজার লঞ্চঘাটে নামছে যাত্রীরা। যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। লঞ্চে যাত্রী বেশি বহন করায় যাত্রীরা ঘাটে আসামাত্রই নামার জন্য হুড়োহুড়ি শুরু করে দেয়। লঞ্চঘাটে কয়েকজন আনসার সদস্য ছাড়া নেই পুলিশ কিংবা বিআইডব্লিউটিএর সদস্যরা। এ কারণে লঞ্চ চলাচলে কোনো নিয়ম মানা হচ্ছে না। যাত্রীরা বাংলাবাজার লঞ্চঘাটে নেমে কিছুটা পথ হেঁটে গণপরিবহনে ছুটছে গন্তব্যে।
ঢাকা থেকে বরিশালগামী যাত্রী খলিলুর রহমান বলেন, ‘ঘাটে আসার পরে শুনি, ফেরিতে পদ্মা পার হতে নাকি দু–তিন ঘণ্টা চলে যায়। তাই ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চে উঠেছি। লঞ্চে ৩৫ টাকার ভাড়া নিল ৫৫ টাকা। অথচ লঞ্চে বসার সিটই পেলাম না। পুরো এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ভিড় ঠেলে বাংলাবাজার ঘাট এসে নামলাম। তাহলে স্বাস্থ্যবিধি অজুহাতে আমাদের থেকে বেশি ভাড়া নিল কেন?’
খুলনাগামী আরেক যাত্রী ইমরান খান বলেন, ‘আমরা তো মুখে মাস্ক ঠিকই পরেছি; কিন্তু লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী তুললে বাধ্য হয়েই আমাদের অন্য যাত্রীর গা ঘেঁষে দাঁড়াতে হয়। লঞ্চে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী পরিবহন করলে এমন পরিস্থিতি হতো না।’
মাদারীপুরগামী যাত্রী সাব্বির আহমেদ বলেন, লঞ্চঘাটে যাত্রী আসামাত্রই তাদের তোলা হচ্ছে। পুরো লঞ্চ ভরার পরে ছাড়া হচ্ছে। লঞ্চ কর্তৃপক্ষ চাইলে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে ছাড়তে পারে। কিন্তু এসব বিষয় নিয়ে কেউ কোনো কথা বলছে না।
বিআইডব্লিউটিসি বাংলাবাজার লঞ্চঘাটের ট্রাফিক পরিদর্শক আক্তার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের এপার (বাংলাবাজার) থেকে যাত্রী ঢাকামুখী হচ্ছে। সামনে ঈদ থাকায় বেশি যাত্রী আসছে ঢাকা থেকে। আমাদের এই নৌপথে ৮৭টি লঞ্চ সচল আছে। লঞ্চগুলোয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী বহন করতে বলা হয়েছে। আমাদের নির্দেশনা না মানলে আমরা ওই লঞ্চগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
এদিকে পদ্মায় তীব্র স্রোত থাকায় তিন দিন ধরে ব্যাহত হচ্ছে ফেরি চলাচল। এ কারণে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া ফেরিঘাটে আটকা পড়েছে কয়েক শ যানবাহন। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন ঢাকাগামী গরুবোঝাই ট্রাকের চালক ও গরুর ব্যবসায়ীরা।
এ সম্পর্কে বিআইডব্লিউটিসি বাংলাবাজার ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) সালাউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে স্রোত থাকবেই। প্রতিবছরই এ সময় আমাদের খুব খারাপ যায়। স্রোত বেশি থাকায় ফেরি পারাপারে দ্বিগুণেরও বেশি সময় লাগছে। ফেরিতে লোড বেশি নিতে পারছি না। আবার ঘাটে সব ধরনের যানবাহনের চাপ বেশি। এরপরও আমাদের চলাচলরত ১৩টি ফেরিতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গরুবোঝাই ট্রাক, অ্যাম্বুলেন্স, লাশবাহী গাড়ি ও কাঁচামালের ট্রাকগুলো পারাপার করছি। তবু ঘাটে যানবাহনের চাপ কমছে না।’