বিসিক শিল্পনগরীর রাসায়নিকমিশ্রিত পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত মাঠ। আজ সোমবার দুপুরে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার গোমরায়
ছবি: প্রথম আলো

মৌলভীবাজার বিসিক শিল্পনগরীর বিভিন্ন কলকারখানার রাসায়নিকমিশ্রিত তরল বর্জ্য গিয়ে মিশছে পাশের হাওরে। এতে ফসলি জমির মাটি, ফসল, মাছসহ সার্বিক পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী বর্জ্য শোধনাগার বা এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) চালু না রাখার কারণে দূষিত পানি মাঠে প্রবেশ করে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

শিল্পের বর্জ্যে হাওরের পরিবেশের ক্ষতির বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আজ সোমবার দুপুরে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার গিয়াসনগর ইউনিয়নের গোমরা এলাকায় অবস্থিত বিসিক শিল্পনগরীসংলগ্ন মাঠ পরিদর্শন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) একটি প্রতিনিধ দল। এ দলে ছিলেন বেলার সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক শাহ শাহেদা আখতার ও সিলেটের মাঠ কর্মকর্তা আল আমিন।

মাঠ পরিদর্শন শেষে বেলার প্রতিনিধি দল জানিয়েছে, বিসিক শিল্পনগরীসংলগ্ন খাইঞ্জার হাওরের মাঠ পরিদর্শনের সময় দেখা গেছে, হাওরের অনেক ঘাস ও আগাছা পুড়ে কালো রং ধারণ করেছে। এসব জমির মাটিও কালো হয়ে আছে। বিসিকের শিল্পকারখানার তরল বর্জ্য খোলা নালার মাধ্যমে হাওরে গিয়ে মিশছে। আশপাশের অনেক জায়গা অনাবাদি পড়ে আছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাসায়নিকমিশ্রিত বর্জ্যের কারণে পানিতে মাছ কমে গেছে। ধান চাষ করা হলেও ফলন ভালো হয় না। এতে কৃষকেরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকেরা তাঁদের জমিতে কৃষিকাজ ছেড়ে দিয়েছেন। এসব পানি পান করে গরু-বাছুর অসুস্থ হয়ে মারা যাচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। দূষিত পানির সংস্পর্শে যাওয়া মানুষ চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা অতীতে জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে আবেদন করেছেন, কিন্তু দূষিত পানির প্রবাহ বন্ধ হয়নি।

বেলার সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক শাহ শাহেদা আখতার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কথা হচ্ছে, পরিবেশ ও জনস্বার্থকে বিবেচনায় রেখে যেকোনো কাজ করা হোক। দেশে প্রচলিত আইন ও বিধিবিধান মেনে শিল্পকারখানা চলুক, অসুবিধা নেই। কিন্তু এখানে যে শিল্পকারখানা চলছে, সেগুলো জনস্বার্থ ও আইনকে উপেক্ষা করেই চলছে।’

মৌলভীবাজার-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে গোমরা এলাকায় ১৯৮৭ সালে ১৫ একর জমিতে মৌলভীবাজার বিসিক শিল্পনগরী চালু হয়। শিল্পনগরীতে প্লট হচ্ছে ১০১টি। এর মধ্যে বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ৬১টি ইউনিট বরাদ্দ নিয়েছে, তা থেকে ৩৮টি ইউনিট চালু আছে বলে বিসিক সূত্রে জানা গেছে।

পরিবেশদূষণের বিষয়ে বিসিক শিল্পনগরীর উপব্যবস্থাপক বিল্লাল হোসেন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, বিসিকের সব পানিই দূষিত নয়। চারটি কারখানায় রাসায়নিকদ্রব্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ চারটিতে ইটিপি স্থাপন করা আছে। যতক্ষণ উৎপাদন চালু থাকে, ততক্ষণ ইটিপিও চালু থাকে বলে কারখানামালিকেরা জানিয়েছেন। পরিবেশ অধিদপ্তর ও তাঁরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন, বেশির ভাগ সময়েই চালু থাকে। তবে সব সময় তো আর পর্যবেক্ষণ করা যায় না। হয়তো গ্যাপ থাকে। অনেক সময় স্থানীয় মানুষের কাছ থেকে দূষিত পানির অভিযোগ তাঁরা পান।

কারখানামালিকদের নিয়মিত ইটিপি চালু রাখতে বলা হয়েছে উল্লেখ করে বিল্লাল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, বিসিকের পানিনিষ্কাশনের নালা পশ্চিম দিকে হওয়ায় ভালো পানি খারাপ পানি সবটাই মাঠের দিকে চলে যায়। বড় কোনো খালে গিয়ে পানি পড়লে এ সমস্যা হতো না। তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলবেন, যাতে প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে হাওরের দিকে পানি না ফেলে বড় কোনো নালার মধ্যে ফেলার ব্যবস্থা করা যায়।

পরিবেশ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. বদরুল হুদা বলেন, বিসিকের ইটিপি প্রয়োজন পাঁচটি কারখানায়, তার মধ্যে চারটিতে ইটিপি আছে। তবে এটাও ঠিক, সব সময় ইটিপি চালু থাকে না। কারখানাগুলোতে আইটি ক্যামেরা লাগানো হবে, যাতে অফিসে বসেও মনিটরিং করা যায়। বিসিকের পানি ব্যবস্থাপনাটাও ভালো নয়। মাঠের পানি নিয়ে ল্যাবে পরীক্ষা করানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। এতে এ পানি কতটা দূষিত, তা জানা যাবে। এটার একটা স্থায়ী সমাধান দরকার।