শিশুকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ২

বগুড়ার গাবতলী উপজেলায় চার বছরের শিশু সানজিদা খাতুনকে অপহরণের পর হত্যার অভিযোগে দুই শিশুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার দুই শিশুর বয়স যথাক্রমে ১৪ ও ১৫ বছর।

মুক্তিপণের বিনিময়ের ফাঁদ পেতে প্রথমে ১৪ বছর বয়সী শিশুকে বুধবার রাতে প্রথমে হাতেনাতে আটক করে গাবতলী মডেল থানা পুলিশ। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আরেক শিশুর বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। শোয়ার ঘরের স্টিলের বাক্স খুলে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় অপহৃত শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়।

সানজিদা উপজেলার নেপালতলী ইউনিয়নের লাঠিমার ঘোন উত্তরপাড়া গ্রামের রাজমিস্ত্রি শাহীন প্রামাণিকের মেয়ে। দুই শিশুকে সানজিদা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ বৃহস্পতিবার বগুড়ার আদালতে পাঠানো হয়। পরে সন্ধ্যায় বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম আসমা মাহমুদের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় ওই দুই শিশু। পরে আদালত তাদের যশোরের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে (বালক) পাঠানোর নির্দেশ দেন।

স্বাকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার আগে দুই শিশু প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, নতুন জামা-কাপড় কেনার টাকার জন্য তারা টেলিভিশনে বিদেশি সিরিয়াল দেখে সানজিদাকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা করে। কিন্তু অপহরণের পর মুখে স্কচ টেপ প্যাঁচাতে গিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে সানজিদা মারা যায়। ঘটনার পর গ্রেপ্তার দুই শিশুর পরিবারের সদস্যরা আত্মগোপন করেছেন।

পুলিশের ভাষ্যমতে, বুধবার সকালে বাড়ির উঠানে খেলার সময় নিখোঁজ হয় সানজিদা। পুকুরে পড়ে গেছে ভেবে প্রথমে ফায়ার সার্ভিসে খবর দিয়ে ডুবুরি ডাকা হয়। কিন্তু বাড়ির পাশে পুকুর ও ডোবায় তল্লাশি চালিয়েও সানজিদার খোঁজ মেলেনি। বিকেলের দিকে পরিবারের কাছে ফোন করে সানজিদাকে অপহরণের কথা স্বীকার করে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। দর–কষাকষির পর ৫০ হাজার টাকায় সানজিদাকে ফেরত দেওয়ার কথা জানানো হয়। মুক্তিপণের টাকা বাড়ির পাশে একটি কালভার্টের নিচে রেখে আসতে বলা হয়। পুলিশকে জানালে সানজিদার ক্ষতি হবে বলেও জানানো হয়। সানজিদার বাবা শাহীন প্রামাণিক বিষয়টি গাবতলী মডেল থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ মুক্তিপণ বিনিময়ের নামে সেখানে ফাঁদ পাতে। তারা ওঁৎ পেতে থাকে কালভার্টের কাছে। রাত সাড়ে সাতটার দিকে মুক্তিপণের টাকা নিতে আসা এক শিশুকে ধরে ফেলে পুলিশ। পরে তার দেওয়া স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে পুলিশ রাত ১১টার দিকে প্রতিবেশীর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে স্টিলের বাক্স খুলে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় সানজিদার লাশ উদ্ধার করে। রাতেই অভিযান চালিয়ে এ ঘটনায় জড়িত আরেক সহযোগীকে আটক করা হয়। তাদের মধে৵ একজন স্থানীয় একটি হাফেজিয়া মাদ্রাসায় এবং অন্যজন স্থানীয় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নবম শ্রেণিতে লেখাপড়া করত বলে তারা জানিয়েছে।

এ ঘটনায় আটক দুই শিশুকে আসামি করে সানজিদার বাবা শাহীন প্রামাণিক আজ সকালে গাবতলী মডেল থানায় হত্যা মামলা করেছেন।

গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়া লতিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার দুই শিশুর মধ্যে একজন জানিয়েছে, নিকটাত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার নতুন পোশাক কেনার টাকা জোগাড় করতে সানজিদাকে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা করে। পরে বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে চার বছরের শিশুকে অপহরণের পর হাত-পা বেঁধে মুখে স্কচ টেপ পেঁচিয়ে ষ্টিলের বাক্সে লুকিয়ে রাখে।

ওসি আরও বলেন, আদালতে ওই দুই শিশু ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। পরে আদালত তাদের যশোরের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে (বালক) পাঠানোর নির্দেশ দেন।