ফরিদপুরে শীতের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পুরোনো গরম কাপড়ের বিক্রি। শহরের বিভিন্ন জায়গায় রাস্তার পাশে অস্থায়ী পুরোনো কাপড়ের দোকানগুলোতে সারা দিন ভিড় লেগেই থাকে। কম দামে ভালো মানের গরম কাপড় মেলায় এসব দোকানে বেচাকেনাও ভালো হয়।
শহরের মহাকালী পাঠশালার মোড় এলাকায় অবস্থিত পুরোনো কাপড়ের দোকানগুলো সব সময় জমজমাট থাকে। এ ছাড়া শহরের শরীয়তুল্লাহ বাজার, কোর্ট এলাকা, টেপাখোলা ও সিএনবি ঘাট এলাকায় পুরোনো গরম কাপড় দেদার বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে।
পুরোনো গরম কাপড়ের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, শীতের শুরু, অর্থাৎ অগ্রহায়ণ মাস থেকে এ কাপড়ের চাহিদা শুরু হয়ে তা অব্যাহত থাকে মাঘের শেষ পর্যন্ত।
ব্যবসায়ীরা জানান, শহরের মহাকালী পাঠশালার মোড় এলাকায় থানা রোডের দুই পাশে ২৭ বিক্রেতা কাপড় বিক্রি করেন। আগে এই বিক্রেতারা ব্যাংক এশিয়ার মোড়, জনতা ব্যাংকের মোড় এলাকায় ফুটপাতে দোকান করতেন। কিছুদিন আগে ফরিদপুর পৌরসভা মহাকালী পাঠশালার মোড় এলাকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ওই জায়গায় এই ২৭ জন পুরোনো কাপড় বিক্রেতাকে পুনর্বাসন করে।
পুরোনো কাপড়ের ব্যবসায়ীরা জানান, ফরিদপুর শহরে তাঁরা মোট ৫২ বিক্রেতা শহরের বিভিন্ন জায়গায় পুরোনো কাপড় বিক্রি করেন। এ শীত মৌসুমে তাঁরা সবাই মিলে অন্তত ৪০০ বেল কাপড় বিক্রি করেন। কোরিয়া, তাইওয়ান, জাপানসহ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে এ কাপড়গুলো বাংলাদেশে আনা হয় জাহাজে।
মানভেদে প্রতি বেল সোয়েটার ফরিদপুরে আনার খরচ পড়ে ৭ থেকে ৯ হাজার টাকা। প্রতি বেল সোয়েটারে ব্যবসায়ীদের লাভ থাকে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। প্রতি বেল জ্যাকেট মানভেদে দাম পড়ে ১৫ থেকে ২৪ হাজার টাকা। এগুলো বিক্রি করে দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা লাভ থাকে।
ফরিদপুরের ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে কাপড়ের বেলগুলো কিনে আনেন।
সাধারণত দুই ধরনের পোশাক ফরিদপুরে বিক্রি হয়ে থাকে। সোয়েটার ও জ্যাকেট। মানভেদে প্রতি বেল সোয়েটার ফরিদপুরে আনার খরচ পড়ে ৭ থেকে ৯ হাজার টাকা। প্রতি বেল সোয়েটারে ব্যবসায়ীদের লাভ থাকে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। প্রতি বেল জ্যাকেট মানভেদে দাম পড়ে ১৫ থেকে ২৪ হাজার টাকা। এগুলো বিক্রি করে দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা লাভ থাকে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের মহাকালীর মোড় এলাকায় বাঁশ, পলিথিন দিয়ে বানানো হয়েছে পুরোনো কাপড়ের দোকান। সেখানে ২ সারিতে রয়েছে ২৭টি দোকান। সকাল আটটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত খোলা থাকে এসব দোকান। তবে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্রেতাদের ভিড় থাকে সবচেয়ে বেশি। সরেজমিনে দেখা যায়, ক্রেতারা তাঁদের চাহিদা অনুযায়ী দেখে-শুনে কিনে নিচ্ছেন এসব পোশাক। এসব দোকানে তরুণ ক্রেতা বেশি।
মহাকালীর মোড়ের বিক্রেতা শহরের পূর্ব খাবাসপুরের বাসিন্দা মো. সিরাজুল ইসলাম (২৯)। তিনি বলেন, ‘ফরিদপুরে যেসব পুরোনো পোশাক আমরা বিক্রি করি, সেগুলো চট্টগ্রাম থেকে কিনে আনি। এসব পোশাক বাংলাদেশে আসে তাইওয়ান, কোরিয়া ও জাপান থেকে। তিনি বলেন, বেশি বিক্রি হয় তরুণদের জ্যাকেট। যেসব নতুন জ্যাকেট বাজারে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি হয়, সেই একই পুরোনো পোশাক আমরা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি করি। এ জন্য আমাদের তরুণ ক্রেতা বেশি।’
পুরোনো শীতের পোশাকের আরেক বিক্রেতা মোকসেদ মিয়া ( ৫৪)। তিনি বলেন, ‘আমি এক মাস ধরে দোকান দিয়েছি। শুরুর দিকে প্রতিদিন দুই থেকে চার হাজার টাকা বিক্রি হতো। গত কয়েক দিনে শীত বাড়ায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকাও বিক্রি হচ্ছে। হাজারে এক থেকে দেড় শ টাকা পর্যন্ত লাভ থাকে।’ তিনি আরও বলেন, নারীদের শীতের পোশাক বেশি চলে। পাশাপাশি শিশুদের সোয়েটারের চাহিদাও ভালো।
মোকসেদ মিয়া জানান, সব মিলিয়ে বেচাকেনা গত কয়েক দিনে বেড়েছে। সামনে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও বিক্রি বাড়বে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ওই এলাকায় নিজের জন্য পুরোনো জ্যাকেট কিনতে এসেছেন ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ছাত্র নাজমুল ইসলাম (২৪)। তিনি বলেন, ‘কিছু পোশাক আছে দামে কম এবং দেখতেও বেশি পুরোনো লাগে না। সেসব থেকেই খুঁজে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে আমি একটা জ্যাকেট কিনতে এসেছি।’
শহরের চুনাঘাটা এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক হালিম শেখ (৪৫) নিজের মা ও মেয়ের জন্য কিনতে এসেছেন উলের মোটা সোয়েটার। হালিম শেখ বলেন, ‘এক থেকে দেড় শ টাকার মধ্যে মোটা ভালো সোয়েটার পাওয়া যায়। আমার বৃদ্ধা মা ও সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ের জন্য তাই কিনতে এসেছি। আমাদের তো বেশি দাম দিয়ে নতুন পোশাক কেনার সামর্থ্য নাই। বাইরের এই পুরোনো গরম পোশাক না থাকলে আমরা বিপদেই পড়ে যেতাম।’
স্কুলশিক্ষিকা শিল্পী রানী বিশ্বাস (৩৫) বলেন, ‘আমার সাত বছর বয়সী মেয়ের জন্য কিছু শীতের কাপড় কিনেছি। ঘরে পরে থাকার জন্য কিছু পুরোনো পোশাক মেয়ের জন্য খুঁজছি। দামে কম হওয়ায় যথেচ্ছ ব্যবহার করা যায় এই পোশাক।’
পুরোনো কাপড়ের পাইকারি বিক্রেতা মো. সুলতান আহমেদ (৪২) বলেন, শীত এলেই পুরোনো গরম পোশাকের কদর বাড়ে। তিনি বলেন, চলতি বছর গতবারের তুলনায় দাম কিছুটা বেশি, তবে তা মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই। তিনি আরও বলেন, ‘সব বয়সী মানুষের শীতের পোশাক সোয়েটার ও জ্যাকেট আমরা বিক্রি করি। অপেক্ষাকৃত কম দামে একটি জ্যাকেট বা সোয়েটার ক্রেতার হাতে তুলে দিতে পারলে ভালো লাগে। জ্যাকেট বা সোয়েটার যখন কোনো ক্রেতার শরীরের সঙ্গে মানানসই হয়, তখন ক্রেতার মুখের হাসি আমার মনে প্রশান্তি এনে দেয়।’