শেষ মুহূর্তের প্রচারে সরগরম আদালতপাড়া

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন উপলক্ষে আদালত প্রাঙ্গণে প্রচারের ব্যানার
ছবি: জুয়েল শীল

শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় সরগরম আদালতপাড়া। ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। যাচ্ছেন ভোটারদের চেম্বারে চেম্বারে (কক্ষে)। নিরাশ করছেন না ভোটাররা। জয়ে আশাবাদী প্রার্থীরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোন প্রার্থীর ব্যালটে সিল পড়বে, তা স্পষ্ট হবে এক দিন পর। কাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এবারের নির্বাচনে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ১৯টি পদের বিপরীতে ২টি প্যানেলে ৩৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁদের মধ্যে একজন স্বতন্ত্র হিসেবে লড়ছেন। তাঁর নাম কিশোর কুমার দাশ। তিনি সমন্বয় পরিষদ থেকে এবার মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে লড়ছেন।

গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক, সহসভাপতি, সহ–সাধারণ সম্পাদক, অর্থ সম্পাদক, লাইব্রেরি সম্পাদক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সম্পাদক এবং ৭টি সদস্য পদসহ মোট ১৪টি পদে আওয়ামী লীগের সমর্থিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ জয় লাভ করেছে। অন্যদিকে সভাপতি, সিনিয়র সহসভাপতি, তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক ও তিনটি সদস্য পদ মিলে বিএনপির সমর্থিত আইনজীবী ঐক্য পরিষদ মোট পাঁচটি পদে জয়লাভ করেছিল। গতবার সভাপতি পদে এনামুল হক ও সাধারণ সম্পাদক পদে এএইচএম জিয়া উদ্দিন জয়ী হয়েছিলেন।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা জানান, এবারও লড়াই হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থিত আইনজীবীর মধ্যে। তবে এবার মুক্তিযুদ্ধ সপক্ষের সমমনা আইনজীবী সংসদ প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করছে না। তারা কোনো প্রার্থীও দেয়নি। সমন্বয় পরিষদ থেকে ২০০৫ সালে বেরিয়ে দল নিরপেক্ষ আইনজীবীরা এটি গঠন করেছিলেন। এবার তাঁদের ভোট টানতে উঠেপড়ে লেগেছেন প্রার্থীরা।
সমন্বয় পরিষদ এবারের নির্বাচনে নিজেদের বিজয় ধরে রাখার চেষ্টায় আছে। আর পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ করছে ঐক্য পরিষদ।
প্রচারণায় শুধু প্রার্থীরা নন, তাঁদের পক্ষ থেকে প্রচারণা চালাচ্ছেন আইনজীবীরা। আজ সরেজমিনে দেখা গেছে, আদালত ভবনের বিভিন্ন কক্ষের বারান্দায়, পথচারী–সেতুর ওপর দল বেঁধে দাঁড়িয়ে আছেন প্রার্থীর পক্ষের লোকজন। তাঁরা ওই সময় হেটে যাওয়া ভোটারদের হাতে তুলে দিচ্ছেন প্রার্থীর পরিচিতিপত্র। আর হাসিমুখে চাচ্ছেন ওই প্রার্থীর জন্য একটি ভোট। বিকেলেও দেখা গেছে একই চিত্র। আদালতের কার্যক্রম শেষ হওয়ায় চেম্বারে আসা আইনজীবীদের কক্ষে কক্ষে ছুটছেন প্রার্থীরা শেষ মুহূর্তে ভোটারের মন জয়ে।
আজ বুধবার আদালত ভবনে এক ভোটার প্রথম আলোকে বলেন, সৎ, দুর্নীতিমুক্ত ও আইনজীবীদের কল্যাণের জন্য যাঁরা কাজ করবেন, তাঁদের ভোট দেবেন। ব্যালটে রায় দেবেন। আরেক ভোটার বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের প্রার্থীদের ভোট দেবেন। গণতন্ত্র রক্ষায় জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী ঐক্য পরিষদের প্রার্থীদের বেছে নেওয়ার কথা জানালেন এক ভোটার। আইনজীবী ভবন নির্মাণ নিয়ে বাধা কাটিয়ে উঠতে পারেন এমন নেতৃত্বকে বেছে নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন কয়েকজন ভোটার।

আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে প্রচারে ব্যস্ত আইনজীবীরা
ছবি: জুয়েল শীল

এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদে লড়ছেন সমন্বয় পরিষদ থেকে আবু মোহাম্মদ হাশেম, সাধারণ সম্পাদক পদে বিগত দুবার নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক (বর্তমান সাধারণ সম্পাদক) এ এইচ এম জিয়াউদ্দিন, সহ–সাধারণ সম্পাদক পদে মো. ওমর ফারুক শিবলী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ঐক্য পরিষদ থেকে সভাপতি পদে লড়ছেন মো. নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক পদে মো. আবদুস সাত্তার সরোয়ার, সহ–সাধারণ সম্পাদক পদে মো. আসাদুর রহমান রিটু। সাধারণ সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কিশোর কুমার দাশ।

৯টি সম্পাদকীয়, ১০টি নির্বাহী সদস্যসহ মোট ১৯টি পদে প্রার্থীরা লড়ছেন। সব কটি পদে প্রার্থী দিয়েছে সমন্বয় ও ঐক্য পরিষদ। তবে এবার একজনও প্রার্থী দেয়নি সমমনা সংসদ। জানতে চাইলে সমমনা সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক তৌহিদুল মনির চৌধুরী আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, করোনার কারণে এবার তাঁরা কোনো প্রার্থী দেননি। অনেকেই অসুস্থ ছিলেন। আগামীবার তাঁরা নির্বাচনে লড়বেন। তাঁদের ভোটব্যাংক এবার কোন প্যানেলে যাবে, এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। তবে বিচার অঙ্গনকে ঘুষ, দুর্নীতিমুক্ত রাখতে যাঁরা ভূমিকা পালন করতে পারবেন, তাঁদেরই বেছে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন এই নেতা।
সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী এ এইচ এম জিয়া উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, দল–মতনির্বিশেষে আইনজীবীদের কল্যাণের জন্য কাজ করবেন। বিগত দুবার সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে করোনাসহ নানা ইস্যুতে আইনজীবীদের পাশে ছিলেন, যত বাধা আসুক সামনেও থাকবেন।

ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রার্থী নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বার ও বেঞ্চের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রেখে আইনজীবীদের মান–মর্যাদা বৃদ্ধি ও কল্যাণের জন্য কাজ করে যাবেন।

নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আগামীকাল সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সমিতির মিলনায়তনে ভোট গ্রহণ করা হবে। ভোটার রয়েছেন ৫ হাজার ২৫০ জন।