জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় আলোচনা সভা ছিল। ব্যানারেও এ কর্মসূচির কথা উল্লেখ আছে। গতকাল রোববার আয়োজিত এ সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পাঁচ নেতা অংশ নেন। তবে শোক দিবসের আলোচনা ছাপিয়ে সিলেট-৩ আসনে অনুষ্ঠেয় উপনির্বাচন নিয়েই এখানে বেশি কথা হয়েছে।
শোক দিবসের এই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া নেতারা মূলত আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমানের পক্ষে ভোট চেয়েছেন এবং তাঁকে কীভাবে জেতাতে হবে, তা নিয়ে নেতা–কর্মীদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে এই আসনে উপনির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।
সিলেট জেলার তিন উপজেলা দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ নিয়ে সিলেট-৩ আসন। এ আসনে ভোটার ৩ লাখ ৫২ হাজার। গত ১১ মার্চ করোনায় এ আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী মারা যান। এরপর আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচনের দিন নির্ধারণ করা হয়। গত ২৮ জুলাই এ আসনের ভোট হওয়ার কথা ছিল। তবে করোনা পরিস্থিতিতে নির্বাচন আয়োজন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ছয় আইনজীবী ও আসনটির সাতজন ভোটার গত ২৬ জুলাই হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের শুনানি শেষে সেদিন হাইকোর্ট উপনির্বাচন ৫ আগস্ট পর্যন্ত স্থগিত করেন। সর্বশেষ ৫ আগস্ট বিষয়টি শুনানির জন্য উঠলে আদালত জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশন আগামী ৭ সেপ্টেম্বরের আগে সুবিধাজনক সময়ে উপনির্বাচন করতে পারবে।
আগের তফসিল অনুযায়ী ২৬ জুলাই নির্বাচনী প্রচার শেষ হয়েছে। তবে এর পর থেকে প্রার্থীরা নানা কৌশলে গণসংযোগ চালাচ্ছেন। নির্বাচনে মোট প্রার্থী চারজন। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের হাবিবুর রহমান, জাতীয় পার্টির আতিকুর রহমান, নির্বাচনে নেমে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক সাংসদ শফি আহমদ চৌধুরী এবং বাংলাদেশ কংগ্রেসের জুনায়েদ মুহাম্মদ মিয়া। জুনায়েদকে মাঠে দেখা না গেলেও অপর প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন।
এ বিষয়ে সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে উপনির্বাচনের সব ধরনের কর্মকাণ্ড স্থগিত ছিল। এখনো নতুন করে উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেনি নির্বাচন কমিশন। তাই কোনো প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচার চালানোরও সুযোগ নেই।
* গতকাল দক্ষিণ সুরমার সভায় আওয়ামী লীগের নেতারা দলীয় প্রার্থীর জন্য ভোট চান। * রিটার্নিং কর্মকর্তা এই সময়ে নির্বাচনী প্রচার চালানোর সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন।
এ সময়ে নির্বাচনী প্রচার চালানোর বিষয়ে কথা বলার জন্য আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শফি আহমদ চৌধুরীর মুঠোফোনে ফোন করা হলেও তাঁরা ধরেননি। তবে এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান বলেন, ‘আদালত ৫ আগস্ট পর্যন্ত নির্বাচন স্থগিত করেছিলেন। এরপর শুনানি শেষে ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের নির্দেশনা দিয়েছেন। তাই যত দিন নির্বাচন স্থগিত ছিল, তত দিন আমরা আদালতের স্থগিতাদেশ মেনে প্রচার চালাইনি। এখন স্থগিতাদেশ না থাকায় কেবল গণসংযোগ করছি।’
গতকাল বেলা ১১টায় দক্ষিণ সুরমা উপজেলার চণ্ডীপুল এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাতবার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা শুরু হয়। শেষ হয় বেলা তিনটায়। এ সময়ের মধ্যে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের অন্তত ৩০ জন নেতা বক্তব্য দেন। প্রত্যেকেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমানকে বিজয়ী করার জন্য কর্মী-সমর্থকদের নির্দেশনা দেন।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। প্রধান বক্তা ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী, উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন ও কার্যকরী কমিটির সদস্য আজিজুজ সামাদ। সভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমানও বক্তব্য দেন।
সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুব উল আলম হানিফ দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ থাকতেই পারে। তবে বিভেদ-দ্বন্দ্ব রাখবেন না। হাবিবুর রহমানকে হারানোর প্রচেষ্টাও চালাবেন না। কারণ, হাবিবকে হারানো মানে দলের মনোনীত প্রতিনিধিকে হারানো।’
আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুরকে জয়ী করতে নেতা–কর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘হাবিবকে প্রতীক ভেবে নৌকায় ভোট দেবেন। হাবিবকে ভোট দেওয়া মানে শেখ হাসিনাকে ভোট দেওয়া। হাবিবকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করলেই প্রমাণিত হবে, বাংলাদেশে হত্যা-ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে উন্নয়ন ও অগ্রগতির পক্ষে আপনারা ভোট দিয়েছেন।’
এর আগে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন সভায় উপস্থিত সবাইকে দুই হাত উঁচিয়ে আল্লাহের নামে শপথ বাক্য পাঠ করান। তাঁর সঙ্গে হাত উঁচিয়ে সবাই শপথ বাক্য পাঠ করেন এভাবে, ‘আমরা আল্লাহর নামে শপথ করছি যে কেন্দ্রে গিয়ে নৌকায় ভোট দেব এবং ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে নৌকায় ভোট দেওয়াব।