শ্রমিকের মৃত্যু, চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে হাসপাতাল ভাঙচুর

মাদারীপুরে নির্মাণশ্রমিক শিপন মাতুব্বরের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে জেলা সদর হাসপাতালে ভাঙচুর চালিয়েছে নিহতের স্বজনরা। আজ বিকেলে হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডে তোলা।
ছবি: প্রথম আলো

মাদারীপুরে শিপন মাতুব্বর (৩৫) নামের এক নির্মাণশ্রমিকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে জেলা সদর হাসপাতালে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছেন নিহতের স্বজনেরা। এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই রিপন মাতুব্বরকে (৩৮) আটক করেছে পুলিশ। আজ রোববার বিকেল ৫টার দিকে সদর হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শিপন সদর উপজেলার চরমুগরিয়া এলাকার আলী মাতুব্বরের ছেলে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার দুপুরে সদর উপজেলার খাগদীতে ইটবোঝাই একটি ট্রলি উল্টে নির্মাণ শ্রমিক শিপন আহত হন। এরপর পরিবারের লোকজন তাঁকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাঁকে হাসপাতালের দোতলায় পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। কিছুক্ষণ পরই শিপনের মৃত্যু হয়।

এ সময় চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিপনকে অক্সিজেন দিতে দেরি করার অভিযোগ এনে নিহতের স্বজনেরা হাসপাতালের দোতলায় ব্যাপক ভাঙচুর চালান। এতে পুরুষ ওয়ার্ডের দরজা, দুটি ইসিজি মেশিন ভাঙা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে নিহতের বড় ভাই রিপন মাতুব্বরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে সদর মডেল থানার পুলিশ।

হাসপাতালে ভাঙচুর শুরু হওয়ার পর থেকে সেখানে ভর্তি হওয়া অন্য রোগীদের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রিনা বেগম নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার অনেক পরে আহত শিপনকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অক্সিজেন দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন নিহতের স্বজনেরা। রোগীর স্বজনেরা ক্ষোভে এই কাজ করেছেন। চিকিৎসক বা নার্সরা দায়িত্বশীল হলে এমন ঘটনা ঘটত না।

নিহত শিপনের স্বজনদের ভাঙচুরের ঘটনায় হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডের দরজা, দুটি ইসিজি মেশিন ভাঙা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ছবি: প্রথম আলো
তাঁর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাসাপাতালে স্থানান্তর করার জন্য বলা হয়েছিল। হাসপাতালে চিকিৎসার কোনো ত্রুটি ছিল না। নিহতের স্বজনদের অভিযোগ সত্য নয়।
সাইফুর রহমান, চিকিৎসা কর্মকর্তা, মাদারীপুর জেলা সদর হাসপাতাল

একই হাসপাতালে ভর্তি রোগী ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে ৭-৮ জন লোক এসে নার্সের রুমের ভেতর ঢোকার চেষ্টা করেন। পরে সেখানে দায়িত্বরত নার্সরা দরজা বন্ধ করে দেন। একপর্যায়ে নিহতের আত্মীয়স্বজন দরজা ভাঙচুর করেন। ব্যাপক তাণ্ডব চালান তাঁরা। আমরা এই অবস্থা দেখে নিচে চলে আসি।’

মাদারীপুর জেলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা (এমও) সাইফুর রহমান বলেন, শিপন নামের ওই রোগী আহত অবস্থায় হাসপাতালে এলে তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাঁর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাসাপাতালে স্থানান্তর করার জন্য বলা হয়েছিল। হাসপাতালে চিকিৎসার কোনো ত্রুটি ছিল না। নিহতের স্বজনদের অভিযোগ সত্য নয়।

মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুল ইসলাম মিঞা বলেন, ‘পুলিশের জরুরি সেবা ৯৯৯-এ আসা একটি ফোন কলের মাধ্যমে হাসপাতাল ভাঙচুরের বিষয়টি জানতে পারি। তাৎক্ষণিক আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। হাসপাতালের জানালার গ্লাস, টেবিল ও চেয়ার ভাঙচুর করেছেন। মূলত চিকিৎসার অবহেলার অভিযোগ এনে রোগীর স্বজনেরা এই হামলা চালান। আমরা ঘটনাস্থল থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত ওই শ্রমিকের বড় ভাই রিপন মাতুব্বরকে আটক করেছি। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’