শ্রমের হাটে চড়া দামে শ্রমিকদের সঙ্গে চুক্তি হচ্ছে গৃহস্থদের

কাজের খোঁজে সাত সকালেই কৃষিশ্রমিকেরা ধানগড়া বাজারে ভিড় করেছেন
ছবি: প্রথম আলো

ঘড়িতে সময় তখন সকাল ছয়টা। কিছু মানুষ হয়তো তখনো ঘুমে আচ্ছন্ন। তবে সাত সকালেই জমজমাট হয়ে উঠেছে সিরাজগঞ্জর রায়গঞ্জ উপজেলার ধানগড়া বাজারের কৃষিশ্রমিকের হাট। এখানে একদল এসেছে সারা দিনের জন্য নিজের শ্রম বিক্রি করতে, আর আরেক দল এসেছে শ্রম কিনতে। শ্রমিকদের সঙ্গে দরদাম মিটিয়ে তাঁদের সঙ্গে নিয়ে গৃহস্থ রওনা দিচ্ছেন গন্তব্যের দিকে।

আজ শুক্রবার সকাল থেকে ধানগড়া বাজারের এই হাট ঘুরে এমন দৃশ্যই দেখা গেল। বৈশাখের ঝড়বৃষ্টিতে মাঠে আর ধান রাখা যাচ্ছে না। তাই এখন ধানকাটা শ্রমিকদের চাহিদা ব্যাপক। ফলে চড়া দামে শ্রমিকদের সঙ্গে গৃহস্থদের চুক্তি হচ্ছে।

উপজেলার ব্রহ্মগাছা ইউনিয়নের হাসিল গ্রাম থেকে হাটে এসেছেন কৃষিশ্রমিক আবদুল মালেক (৪৫)। তিনি বলেন, ২০ জনের দলে তিনি একজন। বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর এলাকার এক গৃহস্থের তিন বিঘা জমির ধান কাটা ও বহন করার জন্য চুক্তি হয়েছে। প্রতি বিঘার জন্য তাঁরা পাবেন সাত হাজার টাকা। এতে তাঁর ভাগে পড়বে এক হাজার টাকার বেশি। যাতায়াত ও দুপুরের খাবার খরচও গৃহস্থ দেবেন।

ধানগড়া ইউনিয়নের বুলাকিপুর গ্রামের কৃষিশ্রমিক আবদুল লতিফ (৪০) বলেন, ‘শেরপুর উপজেলার আমিনপুরে ৯০০ টাকায় দিন হাজিরায় ধান কাটতে যাচ্ছি। সঙ্গে একবেলা খাবার।’

বাজারে দেখা হয় তিন তরুণ কৃষিশ্রমিকের সঙ্গে। তাঁরা উপজেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি এ মৌসুমে ধান কাটার কাজ করেন। ২০-২৫ দিন কাজ করলে ১৮-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত জমা হয়। সঙ্গে এই কয়েক দিন খাওয়াদাওয়া নিয়েও দুশ্চিন্তা থাকে না।

শ্রমিকদের সঙ্গে দরদাম মিটিয়ে তাঁদের সঙ্গে নিয়ে গৃহস্থ রওনা দিচ্ছেন গন্তব্যের দিকে
ছবি: প্রথম আলো

আমিনপুরের গৃহস্থ তাহাজ্জত হোসেন বলেন, গতকাল খেতের ধান কাটা হয়েছে। এখন খেত থেকে বাড়িতে ধান নিয়ে যাওয়ার জন্য লোক নিতে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু শ্রমিকদের মজুরি অনেক বেশি হওয়ায় তিনি এখনো কারও সঙ্গে চুক্তি করতে পারেননি।

চান্দাইকোনা এলাকার দুই ভাই নজরুল ইসলাম আকন্দ ও জহুরুল ইসলাম আকন্দ এসেছেন কৃষিশ্রমিক নিতে। বিরক্ত হয়ে তাঁরা বলেন, জনপ্রতি এক হাজার টাকা মজুরি চান শ্রমিকেরা। ধান বিক্রি করে যা লাভ হবে, সেগুলোর সবই তো ধান কাটার লোকেরা নিয়ে যাবেন।

উপজেলার রণতিথা এলাকার কৃষক বেল্লাল হোসেন বলেন, ‘৫৬ শতক জমির ধান কাটা, খেত থেকে বয়ে আনা ও মাড়াই করতে ১২ হাজার টাকা খরচ করেছি। ধান লাগানোসহ বিভিন্ন সময় খরচে হয়েছে ১৩ হাজার টাকা। ধান পেয়েছি ৪০ মণ। কালিজিরা ধানের বাজারদর এখন ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা। তাহলে বুঝে নেন, কৃষকের লাভ কতখানি হচ্ছে!’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে চলতি মৌসুমে ১৯ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, উপজেলার কৃষিশ্রমিকেরা বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় ধান কাটতে যান। ফলে প্রতি মৌসুমেই কৃষিশ্রমিকদের মজুরি বেড়ে যায়। এ জন্য উপজেলায় ধান কাটতে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে বলে তিনি জানান।