শ্রীমঙ্গলে বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে নানান অজুহাতে ঘর থেকে বের হচ্ছে মানুষ। শহরে পুলিশের চেকপোস্ট ফাঁকি দিয়ে চলছে সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। মাস্ক পরার প্রবণতাও কম। এসব কারণে বাড়ছে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা।
আজ মঙ্গলবার শ্রীমঙ্গলে এক দিনেই করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০, যা এই উপজেলায় এক দিনে সর্বোচ্চ।
মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শ্রীমঙ্গলে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৭৬ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৪৭৭ জন। বর্তমানে ৩২ জন আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি। অন্যরা বাসাবাড়িতে আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এই আক্রান্তের মধ্যে শ্রীমঙ্গল উপজেলা হাসপাতালে নমুনা দেওয়ার পর মারা গেছেন ৭ জন।
উপজেলায় এক দিনে সর্বোচ্চ আক্রান্তের সংখ্যা এখন ৩০। এ ছাড়া গত ১০ দিনে ৮১ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এই উপজেলায় ২৬ জুলাই ৩ জন, ২৫ জুলাই ৩, ২৪ জুলাই ৩, ২৩ জুলাই ১২, ২১ জুলাই ৭, ২০ জুলাই ১, ১৯ জুলাই ৯ ও ১৮ জুলাই ১৩ জন করোনা পজিটিভ হন।
আজ শহরের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় সব দোকানই খোলা। দোকানগুলোর একটি শাটার খোলা রেখে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। হোটেলে বসে খাওয়া নিষেধ হলেও ছোট ছোট হোটেল সেটি মানছে না। মাস্ক পরে ঘর থেকে প্রয়োজনে বের হওয়ার কথা থাকলেও বেশির ভাগ লোকই মুখে মাস্ক ছাড়া বের হন। শহরে অটোরিকশা চলছে। তবে প্রশাসন যখনই মাঠে নামছে বা যেদিকে যাচ্ছে, সেই দিকগুলো পুরো বন্ধ ও মানুষের মুখে মাস্ক পরতে দেখা যাচ্ছে। এভাবেই প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিধিনিষেধ ভাঙছেন ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গড়া স্বেচ্ছাসেবক টিম সুরক্ষা অ্যালার্টের সমন্বয়কারী হৃদয় শুভ বলেন, ‘পুরো উপজেলায় প্রশাসনের লোকজন একসঙ্গে উপস্থিত হওয়া সম্ভব নয়। তাঁরা যেখানে যাচ্ছেন, এর উল্টো দিকে সবকিছু স্বাভাবিক করে দিচ্ছেন ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ। শ্রীমঙ্গলে করোনাভাইরাস নিয়ে অনেকেই নমুনা জমা দিচ্ছেন না। অনেকের জ্বর–সর্দি হলেও নমুনা দিচ্ছে না। যাঁরা সচেতন ও করোনায় পুরো কাবু হচ্ছেন, তাঁরাই শুধু নমুনা জমা দিচ্ছেন। আমাদের ধরে নিতে হবে, আমাদের সবার সামনেই করোনা রোগীরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে সরকারি নীতিমালা মেনে চলা উচিত। দেড় বছর ধরে মানুষকে মাস্ক পরার জন্য জরিমানা করা হচ্ছে, এটি দুঃখজনক। শুধু প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। আমাদের সবার সহযোগিতাতেই এই করোনাভাইরাস দূর হবে।’
শ্রীমঙ্গল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) নয়ন কারকুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শহরের বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়েছি। লোকজন নানা অজুহাতে ঘর থেকে বের হচ্ছেন। আমরা তাঁদের আটকিয়ে জিজ্ঞাসা করলে বেশির ভাগ লোকই আমাদের রোগী পরিচয় দেন, প্রেসক্রিপশন পকেট থেকে বের করে ফার্মেসি থেকে ওষুধ আনার কথা বলেন। এ ছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনার অজুহাত তো থাকছেই। উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি আমরাও শহরে আসা যাত্রীবাহী যানবাহনগুলো আটক করে থানায় নিয়ে যাচ্ছি।’
শ্রীমঙ্গল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. নেছার উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিনা প্রয়োজনে বাসা থেকে বের হওয়া ও দোকানপাট খোলার কারণে আমরা জরিমানা করেছি। এ ছাড়া অপ্রয়োজনে বের হলে লোকজনকে আটক করে থানায় পাঠানো হচ্ছে। মানুষের মধ্যে অসচেতনতা দেখা যাচ্ছে। আমরা সবাইকে বলব, সবাই সচেতন হোন। করোনা ঠেকাতে আমাদের সবার ভূমিকা লাগবে।’