শ্রীমঙ্গলে বিরল প্রজাতির ‘কালনাগিনী’ উদ্ধার

মৌলভীবাজার জেলার মানচিত্র

মৌলভীবাজারে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় একটি বিরল প্রজাতির ‘কালনাগিনী’ সাপ উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন। আজ শুক্রবার সকালে শহরের কালীঘাট সড়কের একটি বাসা থেকে বন বিভাগের সহযোগিতায় সাপটি উদ্ধার করা হয়। প্রাণীটি বর্তমানে বন বিভাগের রেঞ্জ কার্যালয়ে আছে।

সংগঠনটির পরিচালক সজল দেব প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক দিন ধরে কালীঘাট সড়কের চৌমুহনা এলাকার জুয়েল কানুর বাড়ি থেকে ফোন দিয়ে একটি সাপের কথা বলা হচ্ছিল। কিন্তু কয়েকবার গিয়েও সাপটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। গত তিন দিন সাপটি উদ্ধারে প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলেন তাঁরা। সাপটি বাড়ির বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে বেড়াচ্ছিল। মাঝেমধ্যে দেখা দেওয়ায় বাড়ির লোকেরা ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন। আজ বন বিভাগের সাহায্য নিয়ে অক্ষত অবস্থায় সাপটি উদ্ধার করা হয়েছে।

সজল দেব জানান, কালনাগিনীর ইংরেজি নাম অরনেট ফ্লাইং স্নেক বা গোল্ডেন ফ্লাইং স্নেক। বৈজ্ঞানিক নাম ক্রাইপেলিয়া অরনেট। বড় গাছপালা, অপ্রধান বন, মানুষের আবাসস্থলের আশপাশের চাষের জমি, এমনকি মানুষের ঘরের ভেতরেও বাস করতে পারে। এর দৈর্ঘ্য সচরাচর ১ থেকে ১ দশমিক ২ মিটার এবং সর্বোচ্চ ১ দশমিক ৭৫ মিটার হয়ে থাকে। সদ্য ফোটা বাচ্চার দৈর্ঘ্য ২৬ সেন্টিমিটার। দেহ হালকা সবুজ থেকে হলদে সবুজ। দেহের পুরো দৈর্ঘ্য বরাবর কালো ব্যান্ড ও লাল দাগ পর্যায়ক্রমে চলে গেছে। দেহের নিচের মসৃণ আঁশগুলো ফ্যাকাশে সবুজ। ঈষৎ চ্যাপটা কালো মাথার ওপরে হলদে ব্যান্ড আছে। চোখ বড় বড়। বিরক্ত হলে দেহ চ্যাপটা করে। এরা ব্যাঙ, গিরগিটি, ছোট পাখি ইত্যাদি খায়।

সজল দেব আরও বলেন, জুন থেকে জুলাই মাসে ৬ থেকে ১২টি ডিম দেয়, ৬৫ থেকে ৮০ দিনে বাচ্চা ফোটে। এটি দিবাচর দুর্লভ সাপ। মৃদু বিষধর। তবে এ সাপের কামড়ে মারা যাওয়ার রেকর্ড নেই। বাংলা চলচ্চিত্রগুলোতে এটিকে বিষধর সাপ হিসেবে উপস্থাপন করে জনসাধারণের মনে সাপ সম্পর্কে তীব্র ভয় ঢুকিয়ে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। আমাদের আশপাশের জঙ্গল, পুকুর ইত্যাদি কেটে বা ভরাট করে পরিষ্কার করে ফেলায় চারপাশের অনেক প্রাণীই মানুষের বাসাবাড়িতে ঢুকছে। বাংলাদেশ বন্য প্রাণী ফাউন্ডেশনসহ প্রাণিপ্রেমীরা এদের উদ্ধার করছে। অনেক সময় প্রাণীরা মানুষের কারণে মারাও যাচ্ছে। মানুষের ভালোবাসা ও সচেতনতাই পারে তাদের রক্ষা করতে।