সড়ক সংস্কার করা হচ্ছে। উঁচু-নিচু গর্ত হয়ে আছে। পাথর, বালু ফেলে রাখা হয়েছে। উড়ছে বালু ও ধূলিকণা। কোথাও কোথাও এক থেকে দুই ফুট গভীর করে বেড তৈরি করা হয়েছে। সেখানে এক লেনে থেমে থেমে চলছে যানবাহন। এ চিত্র কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী সড়কের ১২ কিলোমিটারজুড়ে। তীব্র গরম ও দাবদাহের মধ্যে সড়কে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা।
দুর্ভোগ থেকে রেহাই পেতে কুষ্টিয়া নাগরিক কমিটির নেতারা স্থানীয় সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) কর্মকর্তাদের কাছে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। সওজ কর্মকর্তারা আশ্বাস দিয়েছেন, ২৫ রমজানের (বুধবার) পর মহাসড়কের উন্নয়নকাজ বন্ধ থাকবে। ঈদের কয়েক দিন পর আবার কাজ শুরু হবে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কুষ্টিয়া কার্যালয় সূত্র জানায়, কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী ও কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক প্রশস্ত ও মজবুতকরণের কাজ চলছে। এর মধ্যে কুষ্টিয়া–ঝিনাইদহ মহাসড়কের বেশির ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি রয়েছে বটতৈল থেকে ত্রিমোহনী পর্যন্ত অধিকতর মজবুতকরণের কাজ।
সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি হচ্ছে কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়কের ১২ কিলোমিটার অংশে। এক পাশ বন্ধ রেখে অন্য পাশে গর্ত করে মহাসড়ক মজবুত করার কারণে কোনোমতে ধীরগতিতে চলছে যানবাহন। ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর এ সড়ক সংস্কারের জন্য কার্যাদেশ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিডেট। প্রায় ১৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কের কাজ চলমান। দুই বছর মেয়াদি এ কাজ আগামী বছরের ২৫ অক্টোবর শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু কাজের গতি খুবই কম।
সরেজমিনে দেখা যায়, ত্রিমোহনী থেকে সড়কের পিচ–পাথর তুলে ফেলা হয়েছে। নতুন করে পাথর ও বালু ফেলা হয়েছে। রোলার করে ফেলা রাখা হয়েছে। এতে সড়কে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে পড়ে আছে ছোট–বড় পাথর। যানবাহন চলার সময় পুরো সড়ক ধুলায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে। রানাখড়িয়া এলাকায় দেখা যায়, খননযন্ত্র ব্যবহার করে এক পাশে গভীর গর্ত করে নিচের বেজমেন্ট তৈরি করছেন শ্রমিকেরা।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিডেটের প্রকল্প পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, মাটিতে আর্দ্রতা বেশি থাকার কারণে গভীর গর্ত করতে হচ্ছে। প্রথমে বালু, তারপর ইট-সুরকি, শেষে পাথরের স্তর তৈরি করে তারপর পিচঢালাই দেওয়া হবে। এভাবে কাজ করায় এবার মহাসড়ক টেকসই হবে। কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে।
আনিসুর রহমান আরও বলেন, গর্ত করে কাজ করায় এক প্রান্তে যানবাহন আটকে রেখে অন্য প্রান্তের যানবাহন ছাড়তে হচ্ছে। এতে ব্যস্ততম মহাসড়কে সারাক্ষণই থেমে থেমে যানজট লেগে থাকছে।
বাসচালক আমিরুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন কমপক্ষে এক থেকে দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর ধীরে ধীরে চলতে হয়। এ অবস্থা চলতে থাকলে ঈদের সময় ভয়াবহ আকার ধারণ করবে যানজট।
ট্রাকচালক আজিবর রহমান বলেন, ত্রিমোহনী বাইপাস থেকে ভেড়ামারা দশমাইল পর্যন্ত ১২ কিলোমিটারে সড়কে কোথাও গর্ত হয়ে আছে, কোথাও লেনের মতো দেবে আছে। এখানে স্টিয়ারিং ধরে রাখা কঠিন। এক দিক টান দিলে অন্য দিকে নিয়ে যায়। যানজট তো আছেই।
বাসের যাত্রী সোনালি খাতুন বলেন, তীব্র গরম ও দাবদাহে বাসে বসে থাকতে হাঁসফাঁস উঠে যায়। ৪০ মিনিটের রাস্তা পার হতে ২ ঘণ্টা লেগে যায়।
কুষ্টিয়া নাগরিক কমিটির সভাপতি এস এম মুস্তানজিদ বলেন, ‘মহাসড়কে ঈদের আগে ও পরে কাজ বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছি। এ ছাড়া মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী সড়কগুলো ছোট যানবাহন চলার উপযোগী করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’
সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিরুল ইসলাম বলেন, বেজমেন্টে কয়েকটি স্তর রাখায় এ কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এ কাজের মেয়াদ আছে। ঈদের আগে ভোগান্তি কমাতে সংস্কারকাজ বন্ধ করে যানবাহন চলাচলের জন্য মহাসড়কের পুরোটা চালু রাখা হবে। ২৫ রোজার আগেই কাজ বন্ধ করা হবে।