ঠাকুরাকোনা-কলমাকান্দা সড়ক
সংস্কারকাজ চললেও দুর্ভোগ কমছে না
সড়কটি প্রশস্তকরণসহ সংস্কার এবং অন্তত ১১টি বেইলি সেতু ভেঙে পাকা সেতুর নির্মাণকাজ চলছে।
নেত্রকোনার ঠাকুরাকোনা-কলমাকান্দা সড়কের সংস্কারকাজ শেষের দিকে হলেও এখনো যান চলাচল ও যাত্রীদের ভোগান্তি দূর হচ্ছে না। সড়কের মধ্যে অন্তত পাঁচটি সেতুর সংযোগ সড়কের কাজ না হওয়ায় এই দুর্ভোগ কাটছে না।
স্থানীয় লোকজন জানান, গুরুত্বপূর্ণ ওই সড়কটি নিয়ে প্রায় আট বছর ধরে মানুষের ভোগান্তি চলছে। সড়কটি প্রশস্তকরণসহ সংস্কার এবং অন্তত ১১টি বেইলি সেতু ভেঙে পাকা সেতুর নির্মাণকাজ চলছে। কাজের সময়সীমা সময় শেষ হলেও এখনো ১৫ শতাংশ কাজ বাকি।
নেত্রকোনা সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনা সদর উপজেলার ঠাকুরাকোনা থেকে কলমাকান্দা উপজেলা সদর পর্যন্ত অন্তত ২১ কিলোমিটার সড়ক দীর্ঘ আট বছর ধরে বেহাল। সড়কটি সংস্কারে ২০১৮ সালের ১০ এপ্রিল একনেকে ৩১০ কোটি ৫ লাখ টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৩১ দশমিক ৮১ হেক্টর জমি অধিগ্রহণে ১০১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, ১১টি পিসি গার্ডার ও আরসি গার্ডার সেতুতে ৭০ কোটি টাকা এবং সড়ক সংস্কারে ১৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। দুটি প্যাকেজে সেতুগুলোর কার্যাদেশ ২০১৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর এবং দুটি প্যাকেজে সড়ক সংস্কারের কার্যাদেশ ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর দেওয়া হয়। সেতুগুলোর কাজ পায় এসিএল এমএইচসিএল ডন জেভি নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আর সড়কের কাজ পায় জন জেভি ও রানা বিল্ডার্স নামে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতা থাকায় স্থানীয় লোকজন সংযোগ সড়ক নির্মাণে বাধা দিচ্ছেন। তাই কিছুটা সময় লাগছে।
এর মধ্যে জন জেভি ঠাকুরাকোনা থেকে গোমাই সেতুর অ্যাপ্রোচ পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের জন্য ৭২ কোটি টাকার কাজ পায়। সেতুগুলোর কাজ শেষ করার সময়সীমা ২০২০ সালের জানুয়ারি আর সড়কের মেয়াদ ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ছিল। সে হিসাবে সেতুর কাজের সময়সীমা ২ বছর ৩ মাস আগে শেষ হয়েছে। অবশ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেতুর মেয়াদকাল চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। বাউসী, আশারানী, মুন্সীখালি, নিশ্চিন্তপুর, বাহাদুরকান্দা ও গোমাই এলাকায় সেতুর কাজ শেষ হলেও সংযোগ সড়কের কাজ শেষ না হওয়ায় ভোগান্তি রয়েই গেছে। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঢিমেতালে কাজ করায় দুর্ভোগ কমছে না।
গত শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, আশারানী খালের ওপর সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ না হওয়ায় বাস, ব্যক্তিগত গাড়িসহ বিভিন্ন যানবাহন থেকে নেমে যাত্রীদের হেঁটে পার হতে হচ্ছে। বেশ কিছু যান কাদায় আটকা পড়েছে। সেতুর কাছে পাবই চৌরাস্তা বাজার। ওই বাজারের ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন সড়কটি দিয়ে ধর্মপাশা, দুর্গাপুর ও কলমাকান্দার প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়া-আসা করেন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। এ ছাড়া প্রতিদিন সহস্রাধিক পর্যটক কলমাকান্দা ও দুর্গাপুরের আসেন। কিন্তু সেতুগুলোর কাজ শেষ না হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
আশারানী সেতুর কাছে যাত্রী নিয়ে আটকা পড়েন কলমাকান্দার ঘনিচা গ্রামের সিএনজি অটোরিকশার চালক মো. আল আমিন মিয়া। তিনি বলেন, সড়কে যাত্রীর অভাব হয় না। বিকল্প কোনো সড়ক না থাকায় ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অনেক মানুষ ভোগান্তি নিয়েই এই সড়ক দিয়ে চলাচল করেন।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসিএল এমএইচসিএল ডন জেভি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক আনোয়ারুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। তবে নেত্রকোনা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহরিয়ার শরীফ খান প্রথম আলোকে বলেন, বাউসী, মুন্সীখালি, নিশ্চিন্তপুর, গোমাই এলাকায় সেতুর পাশে ভূমি অধিগ্রহণের
জটিলতা থাকায় স্থানীয় লোকজন সংযোগ সড়ক নির্মাণে বাধা দিচ্ছেন। তাই কিছুটা সময় লাগছে। কয়েক দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে ভূমি অধিগ্রহণ আইন ২০১৭-এর ৭ ধারা জারি করা হবে। আর ঠিকাদারকে সওজের পক্ষ থেকে দ্রুত কাজ শেষ করতে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে সংকট কেটে যাবে।