চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ
সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উচ্চ শব্দে মাইকিং
শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকার আইন করেছে। কিন্তু ওই আইন লঙ্ঘন করে মতলব দক্ষিণ উপজেলায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান উচ্চ শব্দে মাইকিং করছে।
চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলা শহর ও আশপাশের এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উচ্চ শব্দে মাইকিং হচ্ছে। এতে শব্দদূষণের কারণে ওই এলাকার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। উচ্চ শব্দের কারণে এইচএসসি পরীক্ষার্থীসহ অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উচ্চ শব্দে মাইকিং করা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকার আইন করেছে। কিন্তু ওই আইন লঙ্ঘন করে মতলব দক্ষিণ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে মাইকিং করে প্রচার চালানো হচ্ছে। বাণিজ্যিক এলাকার পাশাপাশি আবাসিক এলাকায় উচ্চ শব্দে মাইকিং করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ায় এই অপতৎপরতা বন্ধ হচ্ছে না।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নাক কান গলা বিভাগের সাবেক কনসালট্যান্ট ও বর্তমানে ঢাকার সলিমউল্লাহ মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মো. নাজমুল হক বলেন, ‘ক্রমাগত শব্দদূষণের ফলে মানুষের মস্তিষ্কের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। মানুষের স্মৃতিশক্তি কমতে পারে। স্মৃতিশক্তি লোপও পেতে পারে। এ ছাড়া অসহনীয় শব্দে মানুষের শ্রবণশক্তিও কমতে পারে। উচ্চমাত্রার শব্দ নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা থাকা জরুরি।’
শব্দদূষণ বিধিমালা, ২০০৬ অনুযায়ী এলাকাভিত্তিক শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী নীরব এলাকায় শব্দের সহনীয় মাত্রা ৫০ ডেসিবল ও রাতের বেলা এই সহনীয় মাত্রা ৪০ ডেসিবল হবে। আবাসিক এলাকায় শব্দের সহনীয় মাত্রা দিনের বেলায় ৫৫ ও রাতের বেলা ৪৫ ডেসিবল থাকতে হবে। আর বাণিজ্যিক এলাকায় শব্দের সহনীয় মাত্রা দিনের বেলা ৭০ ও রাতের বেলা ৬০ ডেসিবল থাকতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক সমীক্ষা ঘেঁটে দেখা যায়, শব্দের সহনীয় মাত্রা ৪৫ ডেসিবল। শব্দের মাত্রা ৭০ ডেসিবলের বেশি হলে তা দূষণের পর্যায়ে পড়ে। প্রতিটি শহরে এখন গড়ে শব্দের মাত্রা ৩২ থেকে ৯০ ডেসিবল পর্যন্ত থাকে। এতে শব্দদূষণের শিকার হচ্ছেন শহরবাসী।
গতকাল রোববার বিকেল চারটায় উপজেলা সদরের কলাদী, ঘোষপাড়া, নবকলস, সিঙ্গাপুর প্লাজা ও টিঅ্যান্ডটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উচ্চ শব্দে মাইকিং চলছে। শব্দের তীব্রতায় কান ঝালাপালা হচ্ছে আশপাশের লোকজনের।
শব্দের মাত্রা পরিমাপ করার ডিজিটাল যন্ত্র দিয়ে পরিমাপ করে দেখা গেছে, গত রোববার সন্ধ্যা ৭টা ৩৮ মিনিটে উপজেলা শহরের কলাদী এলাকায় শব্দের মাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৮ ডেসিবল। ওই এলাকায় সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে মাইকিং ও যানবাহনের হর্ন বাজানোর সময় শব্দের মাত্রা বেড়ে ৮৫ দশমিক ৮ ডেসিবলে পৌঁছায়। উপজেলার টিঅ্যান্ডটি এলাকায় সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে শব্দের মাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক ৩ ডেসিবল। সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিটে ওই এলাকায় উচ্চ শব্দে মাইকিংয়ের সময় সেখানে শব্দের মাত্রা বেড়ে দাঁড়ায় ৯০ দশমিক ০১ ডেসিবলে।
উপজেলা সদরের কলেজশিক্ষক জি এম হাবিব খান অভিযোগ করেন, তাঁর বাসার সামনে প্রতিদিন ভোর ছয়টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উচ্চ শব্দের মাইকিং চলছে। স্থানীয় ১৫-২০টি ডায়াগনস্টিক ও ফিজিওথেরাপি সেন্টারের নানা সেবার বিষয়ে মাইকিং করা হচ্ছে। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ভর্তির বিষয়ে মাইকিং হচ্ছে। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানেও সাউন্ডবক্স লাগিয়ে উচ্চ শব্দে নাচ-গান করা হচ্ছে। এতে উপজেলা সদর ও আশপাশের এলাকার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ প্রতিদিন শব্দদূষণের শিকার হচ্ছে। রাতে ঠিকমতো ঘুমানো যাচ্ছে না। অসুস্থও হচ্ছেন অনেকে। মাইকিংয়ের উচ্চ শব্দে এইচএসসি পরীক্ষার্থীসহ শিক্ষার্থীরা মনোযোগ দিয়ে পড়তে পারছে না। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।
উপজেলার কলেজগেট এলাকার বাসিন্দা শাহনাজ পারভীন বলেন, উচ্চ শব্দে প্রায়ই মাথাব্যথা ও বমি বমি ভাব হয়। শব্দের এ উচ্চ মাত্রা বন্ধ হওয়া দরকার। অন্যথায় জনস্বাস্থ্য আরও ঝুঁকিতে পড়বে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপক দাবি করেন, তাঁর প্রতিষ্ঠান ও এর চিকিৎসকদের প্রচারণায় মাইকিং করাচ্ছেন। তবে ওই মাইকিংয়ের শব্দ নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রয়েছে। এতে কারও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা হক বলেন, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।