সখীপুরে চেয়ারম্যানের টাকায় ঘর পেলেন বৃদ্ধ

সখীপুরের বেতুয়া গ্রামে নতুন ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আবদুল মজিদসহ (লুঙ্গি পরিহিত) অন্যরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

আবদুল মজিদের বয়স ৭০ পার হয়েছে। এখনো দিনমজুরি করে চলে তাঁর সংসার। একটি ছাপরাঘর আছে, তা–ও জরাজীর্ণ। বৃষ্টি এলেই চাল চুইয়ে ঘরের মেঝে ভিজে যায়। রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না তিনি। গ্রামেরই বাসিন্দা কামরুল হাসান মজিদের দুরবস্থার কথা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে জানান। পরে চেয়ারম্যান মজিদের বাড়িতে শৌচাগারসহ পাকা টিনের ঘর তৈরি করে দেন।

ঘটনাটি টাঙ্গাইলের সখীপুরের। বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সখীপুরের বেতুয়া গ্রামে গিয়ে আবদুল মজিদকে ওই ঘরের চাবি বুঝিয়ে দেন। কামরুল হাসান উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি।
আবদুল মজিদ উপজেলার বেতুয়া পশ্চিমপাড়া গ্রামের মৃত বাহর আলীর ছেলে। তাঁর বাবাও আমৃত্যু মানুষের বাড়িতে কাজ করেছেন।

ওই গ্রামের বাসিন্দা সখীপুর আবাসিক মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ রেনুবর রহমান বলেন, ‘আমার বয়স ৬০ পেরিয়েছে কয়েক বছর আগেই। ছোটকাল থেকেই মজিদকে দিনমজুরের কাজ করতে দেখছি। তাঁর এ দুনিয়ায় ১ শতাংশ জমিও নেই। অন্যের জমিতে বসবাস করছেন। একটি জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস করা দেখে গ্রামবাসী আবদুল মজিদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের একটি বাড়ি দাবি করেন। পরে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জুলফিকার হায়দার কামাল তাঁর পকেটের টাকা দিয়ে মজিদকে ওই আদলে একটি পাকা টিনের ঘর করে দেন। আবদুল মজিদকে ঘর করে দেওয়ার জন্য গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে উপজেলা চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানাই।’

রেনুবর রহমান আরও জানান, আবদুল মজিদ প্রায় ৫০ বছর আগে একটি বিয়ে করেন। ওই ঘরে তিন মেয়ে ও এক ছেলে আছে। তিন মেয়ের বিয়ে হয়েছে। এক ছেলে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ি চলে গেছেন। প্রথম স্ত্রীও তাঁকে ছেড়ে চলে যাওয়ায় বছর ২৫ আগে মজিদ দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর কোনো সন্তান হয়নি। দ্বিতীয় বিয়ে করার কারণে তাঁর একমাত্র ছেলে নবীন হোসেন বাবাকে ছেড়ে চলে যান। নবীন বাসাইল উপজেলার কাশিল গ্রামে বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি বিদেশে আছেন। একমাত্র ছেলে বাবার খোঁজ না নেওয়ায় মজিদ কষ্টেই দিন যাপন করছেন।

আবদুল মজিদ বলেন, ‘আমি মরার আগে বিল্ডিং ঘরে শুইয়া যাইতে পারমু, জীবনেও ভাবি নাই। উপজেলা চেয়ারম্যান ছারের (স্যার) আল্লায় যেন ভালা করে।’

বৃহস্পতিবার আবদুল মজিদের ঘর বুঝিয়ে দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জুলফিকার হায়দার, ইউএনও চিত্রা শিকারি, বহেড়াতৈল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান গোলাম ফেরদৌস, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এরশাদুল আলম, সখীপুর আবাসিক মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ রেনুবর রহমান, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান, স্থানীয় সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য রেণু বেগম প্রমুখ।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জুলফিকার হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে হাজার হাজার গৃহহীনকে পাকা ঘর উপহার দিয়েছেন। আমি আমার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয়ে সরকারের ওই ঘরের আদলে একটি ঘর করে দিয়েছি মাত্র। আমার তেমন সামর্থ্য নেই। আমার ইচ্ছা আছে ভবিষ্যতে আরও গরিব ও দুস্থ মানুষের সহযোগিতা করার।’