মৃত সন্তানকে পানিতে ডুবিয়ে রেখে ঘুমিয়ে থাকার ভান করেছিলেন মা
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে মায়ের কোল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে শৌচাগারে বালতির পানিতে ডুবিয়ে নবজাতক হত্যার অভিযোগ উঠেছিল কিছুদিন আগে। ৫ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ভৈরব পৌর শহরের কালীপুর মধ্যপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। তবে ঘটনার ছয় দিন পর ঘটনার নতুন মোড় নিয়েছে।
বালতির পানিতে ডুবিয়ে ওই নবজাতককে হত্যা করা হয়নি। সন্তানকে গোসল করানোর সময় মা সাকিলা বেগমের হাত থেকে বালতির পানিতে পড়ে ওই নবজাতকের মৃত্যু হয়। স্বামীসহ পরিবারের সদস্যদের ভয়ে মৃত সন্তানকে পানিতে ডুবিয়ে রেখে ঘুমিয়ে থাকার ভান করেন সাকিলা। পুরো ঘটনাকে তিনি হত্যা হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। গতকাল বুধবার রাতে ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহিন গণমাধ্যমকর্মীদের এসব তথ্য জানান।
ওসি মো. শাহিন জানান, ১৬ দিন বয়সী নবজাতক আয়ানের লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্ত হয়। এর পর থেকেই ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশ তদন্ত করছিল। এর মধ্যে ওই শিশুর পরিবারের সদস্যদের কয়েক দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। গতকাল বুধবার রাতে ওই শিশুর বাবা ইদ্রিস মিয়া পুলিশকে বিষয়টি জানান। পরে সাকিলা ওই দিনের পুরো ঘটনার বিবরণ দেন। মো. শাহিন বলেন, যেহেতু মায়ের হাতে নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে, তাই ঘটনাটি অসাবধানতাবশত। তাই এ ঘটনায় আইনগত প্রক্রিয়া কী হবে, সেটি এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।
ঘটনা জানতে চাওয়ামাত্রই কেঁদে ফেলেন সাকিলা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গোসল করানোর সময় কীভাবে আয়ান আমার হাত থেকে পড়ে গেল, বুঝতে পারিনি। সবকিছু ধোঁয়াশার মতো মনে হয়েছিল। পরে পানি থেকে উঠানোর পর আয়ানের দেহটি নিথর হয়ে পড়ে। তখন বুঝতে পারি আয়ান বেঁচে নেই। আমার স্বামীর কাছে কী জবাব দেব, শাশুড়িকে কী বোঝাব—এসব ভেবে ভয় পেয়ে যাই। তখনই পানিতে ডুবিয়ে রাখার বিষয়টি মাথায় আসে।’
ঘটনার পর থেকে ইদ্রিস পাগলপ্রায়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আয়ানের মৃত্যুর পর থেকে সাকিলা একদম নীরব হয়ে গেছেন। ঠিকমতো কথা বলেন না। শুধু নীরবে কান্নাকাটি করেন। গতকাল সাকিলা নিজ থেকেই তাঁর কাছে ঘটনাটি খুলে বলেন। তখনই তিনি বিষয়টি পুলিশকে জানানোর সিদ্ধান্ত নেন।
ইদ্রিস পেশায় টিভি মেকানিক। দেড় বছর আগে ইদ্রিস ও সাকিলার বিয়ে হয়। আয়ান তাঁদের প্রথম সন্তান। দুর্ঘটনার ১৬ দিন আগে স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে আয়ানের জন্ম হয়। ইদ্রিস তাঁর মা, স্ত্রী ও এক সন্তানকে নিয়ে পৌর শহরের কালীপুর মধ্যপাড়ায় একটি টিনশেডের ঘরে থাকেন।
৫ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আয়ানের দাদি রান্নাঘর থেকে এসে দেখতে পান, সাকিলার পাশে আয়ান নেই। পরে আয়ানের দাদি সাকিলাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন। পরে তাঁদের চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসেন এবং আয়ানকে খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে শৌচাগারে গিয়ে দেখতে পাওয়া যায়, বালতির পানিতে আয়ানকে ডুবিয়ে রাখা হয়েছে। পরে ওই শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।