‘সন্তানদের আকাশের নিচে অভুক্ত রেখে আমরা সুখনিদ্রায় যেতে পারি না’

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
ফাইল ছবি

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে দেশ ও বিদেশে অবস্থানরত সিলেটের প্রতিনিধিত্বশীল ২৫ নাগরিক বিবৃতি দিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা ৯ মিনিটে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে তাঁরা এ বিবৃতি দিয়েছেন। এতে তাঁরা বলেছেন, সন্তানদের উন্মুক্ত আকাশের নিচে অভুক্ত রেখে আমরা সুখনিদ্রায় যেতে পারি না।

বিবৃতিতে বলা হয়, শাবিপ্রবিতে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে এখন শুধু উদ্বেগ জানিয়ে বসে থাকলেই আর চলবে না। ঐতিহ্য আর ভালোবাসার ধারক এ বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা বেশ আগে থেকেই শুরু হয়েছে। প্রতিবারই নাগরিক সমাজ সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। আজকের দিনেও বসে থাকার অবকাশ নেই।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, উপাচার্য, শিক্ষক নেতা, রাজনৈতিক নেতা আর ছাত্রনেতাদের দাবা খেলার সময় এখন নয়। বিশ্ববিদ্যালয় আজ বিপন্ন। আমাদের সন্তানেরা উন্মুক্ত আকাশের নিচে অনশন করছে। সন্তানদের উন্মুক্ত আকাশের নিচে অভুক্ত রেখে আমরা সুখনিদ্রায় যেতে পারি না। এখন রাজনীতি আর কৌশল চালাচালির সময় নয়। আমাদের সন্তানদের পাশে দাঁড়াতে হবে।

বিবৃতিদাতারা হচ্ছেন আইনজীজী তবারক হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ বজলুল করিম, সাংবাদিক ইব্রাহীম চৌধুরী খোকন, স্থপতি জেরিনা হোসেন, প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রাহক শাহজামান চৌধুরী বাহার, আইনজীবী ইরফানুজ্জামান চৌধুরী, নাগরিক সংগঠক ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, প্রবাসী সংগঠক সাকী চৌধুরী, অধ্যাপক রানা ফেরদৌস, আইনজীবী এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম ও মো. জসিম উদ্দিন আহমেদ, ডা. সৈয়দ মোশতাক আহমদ, গবেষক তাজুল মোহাম্মদ, উন্নয়নকর্মী শেখর ভট্টাচার্য, অধ্যাপক মনোজ কুমার সেন, সাংস্কৃতিক সংগঠক মিশফাক আহমদ চৌধুরী ও এনায়েত হোসেন মানিক, প্রবাসী লেখক ইশতিয়াক রুপু, আইনজীবী সমর বিজয় সী শেখর, লেখক জেসমিন চৌধুরী, নাগরিক সংগঠক আবদুল করিম চৌধুরী কিম, সাংবাদিক ছামির মাহমুদ, পরিবেশ সংগঠক তোফাজ্জল সোহেল, আইনজীবী সুদীপ্ত অর্জুন, মানবাধিকারকর্মী লক্ষ্মীকান্ত সিংহ ও সংগঠক দেবাশীষ দেবু।

বিবৃতিদাতারা শিক্ষার্থীদের পাশে আছেন জানিয়ে আরও বলেন, আলোচনা হোক আর অনুশোচনার সিদ্ধান্ত হোক। অবিলম্বে শাবিপ্রবির অচলাবস্থার অবসান এখন শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, এটি একটি নাগরিক দাবি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু করতে শিক্ষার্থীদের সব যৌক্তিক দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত ১৩ জানুয়ারি। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী। গত শনিবার সন্ধ্যার দিকে ছাত্রলীগ হলের ছাত্রীদের ওপর হামলা চালায়।

পরের দিন বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা ও তাঁদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। ওই দিন রাত সাড়ে আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার ঘোষণা দিলেও শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, খুলনা ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।