সন্তানদের কাছে অবহেলিত সেই বৃদ্ধের পাশে অনেকেই
আয়ের একমাত্র অবলম্বন হারিয়ে দিশাহারা বৃদ্ধ মো. সাজেদুলের (৭০) সব দায়িত্ব নিয়েছে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। তাঁকে সাহায্য করতে দেশ-বিদেশের অনেকে সাড়া দিয়েছেন। কয়েকজন আর্থিকভাবে সহযোগিতাও করেছেন।
গতকাল শুক্রবার ‘সেই সন্তানেরা একবারও জিজ্ঞেস করে না, কেমন আছি’ শিরোনামে প্রথম আলো অনলাইনে এবং আজ শনিবার ‘মানুষ কষ্ট করে কেন সন্তানদের মানুষ করে’ শিরোনামে প্রথম আলো পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন প্রকাশের পর অনেকে সাজেদুলকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন তাঁকে আর্থিকভাবে সহযোগিতার ইচ্ছা পোষণ করেছেন।
সাজেদুলের বাড়ি জামালপুর শহরের ছনকান্দা এলাকায়। স্ত্রী মেহেরুন বেগম। তাঁদের সন্তানদের নাম জানতে চাইলে সাজেদুল বলতে চাইছিলেন না। সন্তানদের প্রতি তাঁর আক্ষেপ আর আক্ষেপ। এত কষ্ট করে সন্তানদের লালন-পালন করে কী লাভ! দীর্ঘশ্বাসের সঙ্গে এমন মন্তব্য তাঁর। সরকারি কোনো ভাতাও পান না এই দম্পতি। বয়সের ভারে অনেকটাই ন্যুব্জ সাজেদুল। আয়ের একমাত্র অবলম্বন ছিল এক ঘোড়ার গাড়ি। সম্প্রতি বাসের ধাক্কায় ঘোড়াটির একটি পা কাটা পড়ে। এরপর বৃদ্ধ স্ত্রীকে নিয়ে দিন কাটছে অর্ধাহারে-অনাহারে। তাঁদের তিনজন ছেলেসন্তান রয়েছে। কিন্তু কেউ তাঁদের খোঁজখবর রাখে না।
আজ সকালে জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিটুস লরেন্স চিরান, জামালপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মো. ফজলুল হক আকন্দ, সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আরিফুর রহমান, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মদন গোপাল পাল ও ইউএনও কার্যালয়ের অফিস সহকারী মাহমুদুল হাসান সাজেদুলের বাড়িতে যান। এ ছাড়া জামালপুর পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন ওই বাড়িতে গিয়ে সহযোগিতার ইচ্ছা পোষণ করেছেন। তাঁরা সব সমস্যার কথা শুনে সমাধানের দায়িত্ব নেন।
জীবনে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। এত কষ্টের মধ্যেও আমার স্ত্রী পাশেই ছিল। কিন্তু ছেলেদের পাইনি। ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে সংসার চালাতে হতো। এক মাস ধরে পুরো আয় বন্ধ। কী করবেন, বুঝতে পারছিলেন না। এরপর প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশের পর সবকিছু পাল্টে যেতে শুরু করেছে। সরকারি লোকজন ও মেম্বার বাড়িতে আসছিল। মনে হচ্ছে, ভাগ্যটা খুলে যাচ্ছে।তিন ছেলে সন্তানের বাবা সাজেদুল (৭০)
পরে ইউএনও ওই দম্পতির হাতে এক মাসের খাদ্যপণ্য—চাল, ডাল, তেল, চিনি, লবণ, নুডলস, চিড়া ও নগদ ১৫ হাজার টাকা তুলে দেন। জামালপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মো. ফজলুল হক আকন্দ ব্যক্তিগতভাবে নগদ দুই হাজার টাকা দেন।
সাজেদুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘জীবনে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। এত কষ্টের মধ্যেও আমার স্ত্রী পাশেই ছিল। কিন্তু ছেলেদের পাইনি। ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে সংসার চালাতে হতো। এক মাস ধরে পুরো আয় বন্ধ। কী করবেন, বুঝতে পারছিলেন না। এরপর প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশের পর সবকিছু পাল্টে যেতে শুরু করেছে। সরকারি লোকজন ও মেম্বার বাড়িতে আসছিল। মনে হচ্ছে, ভাগ্যটা খুলে যাচ্ছে। এক দিনের ব্যবধানে জীবনটা পাল্টে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।’
ইউএনও লিটুস লরেন্স চিরান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই দম্পতির অবস্থা অনেকটাই করুণ। বিষয়টি আগে যদি কেউ নজরে নিয়ে আসত তাহলে আমাদের পক্ষ থেকে অবশ্যই সহযোগিতার চেষ্টা করতাম। তবে প্রথম আলোর প্রতিবেদনের পর তাঁদের কষ্টের কথাগুলো জেনে সহযোগিতা করার সুযোগ পাচ্ছি। প্রথম আলোকে ধন্যবাদ। এই দম্পতির সব সমস্যার সমাধান করা হবে। তাঁদের জন্য একটি পাকা ঘরের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা হবে। তাঁদের জমির কাগজপত্র নেওয়া হয়েছে। ওই নারীর চিকিৎসার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। একই সঙ্গে তাঁদের কর্মসংস্থানের চিন্তাও করা হচ্ছে।’