বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে আজ শনিবার সকাল থেকেই আকাশটা মেঘলা। বিকেলের দিকে সূর্য কিছুক্ষণ উঁকি দিলেও পরক্ষণে মেঘের কোলে হারিয়ে যায়। তবে সৈকতে পর্যটকের কমতি নেই। এরই মধ্যে বিকেল পাঁচটার দিকে সৈকতের লাবনী পয়েন্টের আকাশে দেখা মেলে ‘অজগর’, ‘হাঙর’, ‘বাঘ’, ‘ডলফিন’, ‘জেলিফিশ’, ‘ড্রাগন’-এর। এগুলো প্রাণী নয়, সৈকতে আয়োজিত ঘুড়ি উৎসবের একেকটি ঘুড়ি। আকাশে ঘুড়ি ওড়াউড়ি দেখে মুগ্ধ পর্যটকেরা।
মুজিব বর্ষ পালন উপলক্ষে ‘বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশন’ ও পুরান ঢাকাভিত্তিক সংগঠন ‘ঢাকাবাসী’ যৌথভাবে এই উৎসবের আয়োজন করে। বিকেল পাঁচটায় উৎসবের উদ্বোধন করেন টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন।
সন্ধ্যার আকাশে উড়ে বেড়িয়েছে নানা প্রজাতির ঘুড়ি। বাঘের সঙ্গে সাপের লড়াই, ডলফিনের সঙ্গে ড্রাগনের লড়াই। ঘুড়ি দিয়ে ঘুড়ির সুতো কাটাকাটির এই প্রতিযোগিতা আনন্দের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। বাতাসের গতি যত বাড়ে, মুক্ত আকাশে ঘুড়িগুলোর লম্ফঝম্ফ যেন ততই বাড়ে। দূর থেকে দাঁড়িয়ে বিপুলসংখ্যক পর্যটক ঘুড়ি উড়ানো এই প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন। সন্ধ্যা ও রাতে ওড়ানো হয় আলোর ঘুড়ি ও ফানুস।
ঘুড়ি ওড়ানোর পূর্বশর্ত হচ্ছে বাতাস ও শুষ্ক আবহাওয়া। বিশ্বের দীর্ঘতম এই সমুদ্রসৈকতে এ দুটি বৈশিষ্ট্যই আছে। বাংলাদেশের অহংকার এই সমুদ্রসৈকতের সুরক্ষা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং ময়লা আবর্জনামুক্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সমুদ্রসৈকত রাখার ক্ষেত্রে পর্যটকদের সচেতন করতে এ ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করেছি আমরা।
ঢাকাবাসী ও বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশনের সভাপতি মো. শুকুর সালেক বলেন, ১৯৯০ সাল থেকেই দুই সংগঠনের ব্যানারে দেশে ঘুড়ি উৎসব হয়ে আসছে। ঢাকায় সাকরাইন (পৌষসংক্রান্তি) উৎসব, চৈত্র সংক্রান্তি উৎসব, পয়লা বৈশাখে ঘুড়ি উৎসব এবং এশিয়ান দেশের ঘুড়ি আসরের আয়োজন করে ‘ঢাকাবাসী’ সংগঠন। তাঁরা কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে নিয়মিত ঘুড়ি উৎসব করে আসছেন, যা পর্যটন শিল্পের বিকাশে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। তবে এবার করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে দিনব্যাপী ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এবার আকাশে উড়েছে ৪০ প্রজাতির ছোটবড় অন্তত ১০০টি ঘুড়ি। এর মধ্যে অজগর, প্রজাপতি, ড্রাগন, জেলিফিশ, বাঘ, ডলফিন, জাপানি ঘুড়ি, পঙ্খিরাজ, ইগল, বাংলাদেশি জাতীয় পতাকা উল্লেখযোগ্য।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে প্রজাপতি ঘুড়ি উড়ান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সর্বশেষ তিনি ১৯৯১ সালে ঢাকায় বাসার ছাদে ঘুড়ি উড়িয়েছিলেন। নানা ব্যস্ততায় তাঁর আর ঘুড়ি উড়ানো হয়নি। আজ সৈকতে সুযোগটি কাজে লাগালেন। তিনি বলেন, সৈকতে এখন লাখো পর্যটকের সমাগম চলছে। ঘুড়ি উৎসব তাঁদের আনন্দে নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে।
এ সময় সৈকতে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, বালুচরে দাঁড়িয়ে একটি প্রজাপতি ঘুড়ি ওড়াচ্ছিল এক কিশোর। কথা বলে জানা গেল, তার নাম আফরিদ। সে কক্সবাজার মডেল হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। আকাশে আরেকটি সাপ ঘুড়ির সঙ্গে তার প্রজাপতির লড়াই চলছিল। আফরিদ বলে, প্রতিবছর উৎসবে এসে ঘুড়ি উড়ানোর চেষ্টা করে সে। ঘুড়ি উড়াতে তার আনন্দ লাগে। মনে হয়, ঘুড়ির মতো করে নিজেও আকাশে উড়ছে।
অজগর ঘুড়ি ওড়াচ্ছিলেন চট্টগ্রাম থেকে আসা পর্যটক নজরুল ইসলাম। কিছুক্ষণ পরপর তাঁর ঘুড়িটি মাটিতে পড়ে যাচ্ছিল। নজরুল (৩৪) বলেন, তিনি ২০ বছর আগে একবার বাড়ির ছাদে তিনি ঘুড়ি উড়িয়েছিলেন। এরপর আর সুযোগ হয়নি। সৈকত ভ্রমণে এসে সে ইচ্ছাটা পূরণ করে নিলেন। তবে ঘুড়ি উড়াতেও প্রশিক্ষণ লাগে বলে তিনি জানান।
ঢাকাবাসীর সভাপতি মো. শুকুর সাদেক প্রথম আলোকে বলেন, ঘুড়ি ওড়ানোর পূর্বশর্ত হচ্ছে বাতাস ও শুষ্ক আবহাওয়া। বিশ্বের দীর্ঘতম এই সমুদ্রসৈকতে এ দুটি বৈশিষ্ট্যই আছে। বাংলাদেশের অহংকার এই সমুদ্রসৈকতের সুরক্ষা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং ময়লা আবর্জনামুক্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সমুদ্রসৈকত রাখার ক্ষেত্রে পর্যটকদের সচেতন করতে এ ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করেছেন তাঁরা।