দীর্ঘ পাঁচ বছর পর ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার শহরের সাধারণ পাঠাগার মাঠে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে যোগ দেন দলীয় নেতা–কর্মীরা। তবে যে জন্য সম্মেলন, সেই কমিটি গঠন করা হয়নি। এ জন্য অনেক নেতা–কর্মী হতাশ হয়েছেন। সম্মেলনে জানানো হয়েছে, আগামী ৯ এপ্রিল ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর উপজেলা বিএনপির সম্মেলন হয়। তখন অনোয়ার হোসেন সভাপতি ও আবদুল হামিদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তাঁদের নেতৃত্বে গঠিত কমিটিই পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করে আসছে। আজ সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করে ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য ৯ এপ্রিল তারিখ ঘোষণা করেন।
উপজেলা বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন, আজ বেলা দেড়টার দিকে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে উপজেলা বিএনপির সম্মেলন শুরু হয়। সদর উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এ এন এম রোকন উদ্দিনের সভাপতিত্বে প্রথম অধিবেশনের শুরুতে সাংগঠনিক প্রতিবেদন পাঠ করেন সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হামিদ।
সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সহ আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা, জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সাংসদ জাহিদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিন, সহসভাপতি ওবায়দুল্লাহ মাসুদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সম্মেলনে রুমিন ফারহানা তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বলে একটা, আর করে আরেকটা। তারা যেটা বিশ্বাস করে, সেটা মুখে বলে না। মুখে যেটা বলে, সেটা কাজে করে না। আজ যেটা করে, সেটায় তাদের না বিশ্বাসে আছে, না সেটা তাদের মুখে আছে। বাংলাদেশে যদি কোনো মুনাফেক দল থাকে, সেটা আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগ।’
রুমিন ফারহানা আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালে যেভাবে জনগণকে ধোঁকা দিয়েছে, ২০১৮ সালে যেভাবে জনগণের অধিকার লুট করেছে; ২০২৩ সালে সেভাবে আর জনগণের অধিকার লুট করতে দেব না। আপনারা এমনিও মামলা খান, ওমনিও মামলা খান। এলাকায় থাকলেও মামলা হয়, এলাকা ছাড়লেও মামলা হয়। এমনকি মরে গেলেও মামলা হয়। তাহলে কিসের ভয়? ঘরে থাকলেও মামলা হবে, আন্দোলনে নামলেও মামলা হবে। তাহলে কোনটা করা উচিত? আমি বলি, আন্দোলনের কোনো বিকল্প নাই। আর এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা ২০২৩ সালে একটা অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায় করব।’
তিনটার দিকে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করেন। সে সময় নেতা–কর্মীদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়। পরে মির্জা ফখরুল বলেন, সম্মেলনের যে মূল কাজ—নতুন একটা কার্যকরী কমিটি গঠন করা। সেটা সুন্দরভাবে শেষ হবে। আপনাদের মতামত নিয়েই কমিটি করব। আমাদের একটু সময় দিতে হবে। ৯ এপ্রিল কাউন্সিলদের আবার আসতে হবে। এসে আপনাদের ভোট দিতে হবে।’
পরে ভোট পরিচালনার জন্য তিন সদস্যের কমিটি ঘোষণা করেন মির্জা ফখরুল। কমিটিতে জেলা বিএনপির সহসভাপতি নুর করিম, আইনজীবী বদরুল রহমান, মো. সারোয়ারের নাম ঘোষণা করা হয়।
সম্মেলনে উপস্থিত আল আমিন নামে বিএনপির এক কাউন্সিলর বলেন, ‘আজই কমিটি ঘোষণা করলে আমরা নতুন নেতৃত্ব পেয়ে যেতাম। জানি না পরে কী হয়।’
এ বিষয়ে কথা হয় জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমানের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আজই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সম্মেলন শুরু করতে দেরি হয়। তা ছাড়া আজ একই স্থানে পৌর বিএনপির সম্মেলন রয়েছে। সে কারণে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৯ এপ্রিল ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব গঠনের কাজটি শেষ করা হবে।