নওগাঁয় ধান সংগ্রহ
সময় বাড়িয়েও অর্জন ১৪%
কয়েকটি কারণ সামনে আনছেন কৃষকেরা। এর মধ্যে রয়েছে সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে সময়ক্ষেপণ ও আর্দ্রতার কথা বলে হয়রানি।
নওগাঁয় এবার ধান সংগ্রহ অভিযান নির্ধারিত সময়ের পর আরও ১৫ দিন বাড়ানো হয়েছিল। তবু ব্যর্থ হয়েছে চলতি মৌসুমের বোরো সংগ্রহ অভিযান। লক্ষ্যমাত্রার ১৪ শতাংশের কম ধান সংগ্রহ করতে পেরেছে জেলার সরকারি খাদ্যগুদামগুলো। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারদর বেশি হওয়ায় গুদামে ধান দেননি কৃষক। অবশ্য নির্ধারিত সময়ে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৯৭ শতাংশের বেশি অর্জিত হয়েছে। কারণ, লাইসেন্স টিকিয়ে রাখতে চালকলগুলো চুক্তি অনুযায়ী সরকারি গুদামে চাল দিয়েছে। এ জন্য তাদের গুনতে হয়েছে লাখ টাকার লোকসান।
চলতি বোরো মৌসুমে সরকারি গুদামে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শেষ হয়েছে গত ৩১ আগস্ট। গত ৭ মে সরকারি গুদামে ধান-চাল কেনা শুরু হয়। সংগ্রহ অভিযান শেষ হওয়ার কথা ছিল ১৬ আগস্ট। তবে নির্ধারিত সময়ে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেও পৌঁছাতে পারেনি জেলার সরকারি খাদ্যগুদামগুলো। এ অবস্থায় আরও ১৫ দিন সময় বাড়িয়ে সংগ্রহের সময়সীমা ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এবার ধান-চাল সংগ্রহের পুরো সময়জুড়েই সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারে ধান ও চালের দাম বেশি ছিল। এ কারণে অনেক প্রচার-প্রচারণার পরও কৃষকেরা সরকারি গুদামে ধান দিতে আগ্রহ দেখাননি। তবে চালকলের মালিকদের সঙ্গে চুক্তি থাকায় তাঁরা শর্ত মোতাবেক সরকারি গুদামে চাল দিয়েছেন।
জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে নওগাঁর ১১টি উপজেলার ১৯টি খাদ্যগুদামে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৫ হাজার ৬৯৭ মেট্রিক টন। ১৪ শতাংশের নিচের আর্দ্রতার ধান প্রতি মণ ১ হাজার ৮০ টাকা (২৭ টাকা কেজি) দরে কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। লটারি ও অ্যাপের মাধ্যমে কৃষকদের গুদামে ধান দিতে আবেদন করার আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু শুরু থেকেই বাজারে এবার ধানের দাম ভালো ছিল। ফলে সেই আহ্বানে কৃষকদের সাড়া মেলেনি। সংগ্রহের শেষ দিন গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ধান সংগ্রহ হয়েছে ৩ হাজার ৫৮২ মেট্রিক টন, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১৩ দশমিক ৯১ শতাংশ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নওগাঁর বিভিন্ন হাটবাজারে বর্তমানে প্রতি মণ (৪০ কেজি) জিরা ধান বিক্রি হচ্ছে ১২৩০-১২৬০ টাকায়। প্রতি মণ কাটারীভোগ ১২৫০-১২৭০ টাকায় এবং বিআর-২৮ ধান ১১০০-১১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সরকারি গুদামে ধানের দাম কম ধরার পাশাপাশি আরও কিছু কারণ সামনে আনছেন কৃষকেরা। এর মধ্যে রয়েছে সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে সময়ক্ষেপণ ও আর্দ্রতার কথা বলে হয়রানিসহ নানান ঝক্কিঝামেলা। ফলে খুব বেশি লাভের আশা না থাকলে সরকারি গুদামে ধান দিতে চান না কৃষকেরা।
জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক আলমগীর কবির প্রথম আলোকে বলেন, এবার মৌসুমের শুরু থেকেই প্রতি মণ ধানের দাম হাজার টাকার ওপরে ছিল। এ কারণে কৃষকেরা গুদামে ধান বিক্রি করতে আবেদনই করেননি। তবে চাল সংগ্রহ হয়েছে প্রায় শতভাগ।
নওগাঁয় চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ও তা অর্জনের চিত্র থেকেও বিষয়টি পরিষ্কার। জেলায় ৪০ টাকা কেজি দরে ৪৯ হাজার ২৬১ মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল এবং ৩৯ টাকা কেজি দরে ৩ হাজার ৯৮৫ মেট্রিক টন আতপ চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সে হিসেবে চাল কেনার মোট লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৩ হাজার ২৪৬ মেট্রিক টন। তার বিপরীতে ৫১ হাজার ৭৯৩ মেট্রিক টন চাল কিনেছে জেলার সরকারি গুদামগুলো। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ৯৭ শতাংশের কিছু বেশি।
আমদানির চাল আসছে, কমছে দাম
গত দু-তিন মাসের ব্যবধানে নওগাঁয় পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে চালের দাম কেজিতে ১-২ টাকা কমেছে। বৃহস্পতিবার নওগাঁ শহরের আলুপট্টি চালের মোকামে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে মিল গেটে প্রতি কেজি শর্টার জিরা (মিনিকেট) চাল ৫০-৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নন-শর্টার জিরা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৭-৪৮ টাকা কেজিতে। এ ছাড়া কাটারীভোগ চাল ৫২-৫৪ টাকায় এবং বিআর-২৮ চাল ৪২-৪৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে ও খাদ্যগুদামে মজুত ঠিক রাখতে শুল্ক কমিয়ে চাল আমদানির সুযোগ করে দিয়েছে সরকার। চালের ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে নেমেছে। এতে বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ চাল আসছে। আমদানি করা ওই চালের কারণে বাজারে দাম কমতে শুরু করেছে। দাম আর বাড়ার সুযোগ নেই; বরং আরও কমতে পারে।