সরকারি খাদ্যগুদামে ট্রাকসহ ৫৯১ বস্তা নষ্ট চাল জব্দ
নাটোর সদর উপজেলা খাদ্যগুদামে বৃহস্পতিবার দুপুরে অভিযান চালিয়ে ৫৯১ বস্তা নষ্ট চালসহ একটি ট্রাক জব্দ করেছে উপজেলা প্রশাসন। নাটোর পৌর আওয়ামী লীগের এক নেতা তিন চালকলের মালিকের পক্ষে এসব চাল সরবরাহ করছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলা খাদ্যগুদাম সূত্রে জানা যায়, সরকারের বোরো চাল সংগ্রহ অভিযানের অংশ হিসেবে সদরের কাফুরিয়া এলাকার মেসার্স আব্দুর রহমান, দস্তানাবাদের মেসার্স তৈয়ব চাউলকল ও নলডাঙ্গার মাধনগরের মেসার্স আব্দুল মান্নান বরাবর বরাদ্দ দেওয়া হয়। তাদের পক্ষে ৫৯১ বস্তা চাল সরবরাহ করছিলেন বেলালুজ্জামান বেলু নামের এক চাল ব্যবসায়ী। তিনি নাটোর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
সূত্রে জানায়, ট্রাক থেকে নষ্ট চালের বস্তা গুদামে নামানোর সময় বিষয়টি একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তার নজরে আসে। খবর পেয়ে সাংবাদিকেরাও সেখানে উপস্থিত হন। তাঁদের মাধ্যমে খবর পেয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজ খাতুন গুদামে অভিযান পরিচালনা করেন। তিনি নিকৃষ্ট মানের চাল সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পরে তাঁর নির্দেশে ৫৯১ নষ্ট চালের বস্তাসহ একটি ট্রাক জব্দ করা হয়। এ সময় ইউএনও বলেন, এসব চাল পশুও খাবে না।
মেসার্স তৈয়ব চাউলকলের মালিক তৈয়বুর রহমান বলেন, ‘খারাপ চাল কীভাবে গেল তা তো বলতে পারছি না। খোঁজ নিয়ে পরে জানাব।’ তাঁর বরাদ্দ করা চাল বেলালুজ্জামান কেন গুদামে সরবরাহ করছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার পার্টনাররা (অংশীদার) হয়তো যৌথভাবে সরবরাহ করছিলেন।’ অন্য দুই চালকলের মালিকের মুঠোফোনে কল দিলেও তাঁরা ধরেননি।
যোগাযোগ করলে বেলালুজ্জামান বলেন, ‘জব্দ করা চাল আমি সরবরাহ করি নাই। আমার মিলের নামে বরাদ্দ করা চাল আমি অনেক আগেই সরবরাহ করেছি। এগুলো অন্য তিন মিলারের।’ গুদাম কর্তৃপক্ষ ‘আপনাকে’ চাল সরবরাহকারী বলছেন জানালে তিনি বলেন, ‘আমি রাজনীতি করি। হয়তো সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য কেউ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন।’
সদর উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মফিজ উদ্দিন জানান, ৪০ টাকা কেজি দরে ভালো মানের বোরো চাল সরবরাহের চুক্তি হয়েছিল তিন চালকলের মালিকের সঙ্গে। তাঁদের দেওয়া বরাদ্দ কিনে নিয়েছেন বেলালুজ্জামান। তিনি কৌশলে বস্তার দুই প্রান্তে ভালো চালের মাঝে অতি নিম্নমানের চাল ঢুকিয়ে সরবরাহ করছিলেন। ১৪৪ বস্তা চাল ঢোকানোর পর বিষয়টি জানা যায়। তখন চালগুলো সিলগালা করা হয়। এই অনিয়মের জন্য চাল সরবরাহকারীর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক দেখবেন।
এ বিষয়ে জানার জন্য জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রবীন্দ্র লাল চাকমাকে বিকেলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ধরেননি।
ইউএনও আফরোজ খাতুন বলেন, ‘আমি চালগুলো সিলগালা করে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের জিম্মায় দিয়ে এসেছি। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানিয়ে আমি ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসকের কাছেও প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। এখন তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন, আমি তাই করব।’
জেলা প্রশাসক শামীম আহদেম বলেন, ‘সদরের ইউএনও প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। কিন্তু নিকট আত্মীয় মারা যাওয়ায় আমি ঢাকায় অবস্থান করছি। ফিরে গিয়ে প্রতিবেদন অনুসারে বিষয়টি খাদ্যসচিব ও মহাপরিচালককে জানানো হবে। আশা করছি, তাঁরা দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।’