ঘড়ির কাঁটায় সকাল সাড়ে ছয়টা। ফুলের ডালা সাজিয়ে বসেছেন সুশীল প্রসাদ গুপ্ত। ৩৩ বছরের অভ্যাস সকালবেলায় ফুল নিয়ে বসা। লকডাউনে যশোরের ফুল আসছে না। স্থানীয় ফুল নিয়েই বসেছেন। কোনো ক্রেতা নেই। কিন্তু সুশীলের আশা, পূজারিরা আসবেন। প্রায় এক ঘণ্টায়ও কোনো পূজারি এলেন না। হালকা বৃষ্টি এলে সুশীল ফুলের ডালা নিয়ে শেডের নিচে চলে যান। রাজশাহী নগরে লকডাউনের তৃতীয় দিনের সকালে সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে একজন ফুল ব্যবসায়ীর সকাল শুরু হলো এভাবেই।
সকাল ছয়টার পর থেকেই নগরের সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে দাঁড়িয়ে লকডাউনের ভেতরেও মানুষের কর্মব্যবস্ততার কিছু দৃশ্য দেখা গেল। কয়েকজন অটোচালক লকডাউনের কড়াকড়ি শুরুর আগেই কিছু টাকা আয় করতে গাড়ি নিয়ে বের হয়েছেন। এদিক থেকে ওদিক ছুটছেন কোনো যাত্রী মেলে কি না, সে আশায়। দু-একজন যাত্রীও মিলছে তাঁদের।
সবজি ও মাছের গাড়িগুলো ঢুকছে শহরে। রাজশাহী নগরের পূর্ব পাশে অবস্থিত জেলার পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর থেকে কয়েকটি হিউম্যান হলার যাত্রী নিয়ে সাহেববাজার হয়ে রাজশাহী কোর্ট এলাকার দিকে চলে গেল। বোঝা গেল, হিউম্যান হলারের যাত্রীরা কোনো কাজে বের হয়েছেন। সকাল ৭টা ১৯ মিনিটে একটি ভ্যানে দুজন ট্রাফিক পুলিশ এসে নামলেন।
এদিকে সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে প্রতিদিন যেখানে অটোরিকশা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে যায়। লকডাউনের দিনেও একই অবস্থা হচ্ছে দেখে সাদেক নামের একজন ট্রাফিক পুলিশ বকা দেন। তবু একটি অটোরিকশা দাঁড়িয়েই থাকল। পুলিশ এবার চালকের কাছে গিয়ে বকা দিলে তিনি চলে যান। ধীরে ধীরে মানুষের আনাগোনা বাড়তে থাকল। আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য এসে ইতিমধ্যে ডিউটিতে যোগ দিয়েছেন। তবে সুশীলের দোকানে কোনো পূজারি আসেননি।
সুশীল বললেন, তাঁর ছয় সদস্যের পরিবার। ১৯৮৮ সালে যশোর থেকে চার আনায় ৫০টি রজনীগন্ধার এককেটি আঁটি কিনে আনতেন। রাজশাহীতে এনে এক টাকায় বিক্রি করতেন। সেই শুরু। প্রতিদিন এখানে এসে বসেন। তিনি বললেন, ‘সরকার তো লকডাউন দিয়েই খালাস। আমাদের মতো মানুষের একটু খাবারের ব্যবস্থা যদি করত, তাহলে আর লকডাউনের মধ্যে এখানে এসে বসতে হতো না।’
নগরের কুমারপাড়ার মোড়ে ঘোলের হাঁড়ির ওপরে লবণ আর একটি গ্লাস এনে রেখেছেন একজন ঘোল ব্যবসায়ী। হাঁড়ির কাছে তাঁকে পাওয়া গেল না। ঘোলের হাঁড়ির পাশে পুলিশের একটি গাড়ি এসে অবস্থান নিয়েছে।