হাসপাতালের মর্গের ভবন জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। জনবলসংকট ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে ময়নাতদন্ত ব্যাহত হচ্ছে। একের বেশি মরদেহ এলে ভবনের সামনের সড়কে ফেলে রাখা হয়। এই পরিস্থিতি ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের মর্গের।
এদিকে মর্গের ওই জরাজীর্ণ ভবনের সামনে ২০২০ সালে দুই কক্ষের একটি নতুন ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করে গণপূর্ত বিভাগ। কিন্তু বরাদ্দ না থাকায় সে কাজও বন্ধ।
ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, তিন দশক আগে ঝালকাঠি শহরের চাঁদকাঠি ব্র্যাক মোড়ের গাজিবাড়ি এলাকায় এক কক্ষের একটি ভবনে মর্গ চালু করা হয়। বরাদ্দ না থাকায় বর্তমানে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ রয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য ব্যবহৃত ওজন মাপার যন্ত্র, ছুরি ও কুড়ালসহ সব সরঞ্জামের সংকট রয়েছে দীর্ঘদিন। গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর রাতে দুর্বৃত্তরা সেখানকার দরজা ভেঙে নতুন যন্ত্রাংশ চুরি করে নিয়ে যায়। ওই কক্ষে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র ও মরদেহ রাখার হিমাগারের ব্যবস্থা নেই। নিয়ম অনুযায়ী বিকেল পাঁচটার পর থেকে সকাল না হওয়া পর্যন্ত কোনো মরদেহের ময়নাতদন্ত হয় না। এতে রাতে আনা মরদেহের পচন ধরার আশঙ্কা থাকে।
অপর দিকে ফরেনসিক প্রতিবেদনের জন্য কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ঢাকায় পাঠাতে হলে ফরমালিনের প্রয়োজন হয়। মর্গের জন্য ফরমালিন হাসপাতাল থেকে সরবরাহ না করায় মৃত ব্যক্তির স্বজনদের তা আলাদা করে কিনতে হয়। এ জন্য তাঁদের তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা গুনতে হয়।
সম্প্রতি ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মৃত ব্যক্তিদের ময়নাতদন্ত হয়েছে এখানে। তখন মর্গে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় সড়কের পাশেই মরদেহগুলো স্তূপ করে ফেলে রাখা হয়।
২০১৭ সালে মর্গের ডোম চাকরি ছেড়ে চলে যান। সেই থেকে পদটি শূন্য। নিরাপত্তাপ্রহরীর পদেও কেউ নেই। বর্তমানে অস্থায়ীভাবে
ডোমের কাজ করছেন এক ব্যক্তি, যাঁর বেতন দেওয়া হয় স্থানীয় সাংসদ আমির হোসেন আমুর নিজস্ব তহবিল থেকে।
গত ৩০ ডিসেম্বর শহরের চাঁদকাঠি ব্র্যাক মোড় এলাকায় মর্গে গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ ছোট কক্ষে ময়নাতদন্তের কাজ চলছে। লাশকাটা ঘরের পেছনের দিকে রয়েছে গুরুধাম খাল। সেখানে বর্জ্য ও রক্ত ফেলা হয়। ফলে নষ্ট হচ্ছে খালের পানি।
স্থানীয় বাসিন্দা সুকমল ওঝা বলেন, ‘বাসা কোথায় কেউ জানতে চাইলে লাশকাটা ঘরের পাশে পরিচয় দিতে হয় আমাদের। হাসপাতালে লাশ কাটার জন্য নির্ধারিত কক্ষ থাকলেও সেটি ব্যবহার করা হচ্ছে না। আমাদের সন্তানেরা লাশকাটা ঘরের পাশ দিয়ে যাতায়াত করতে ভয় পায়।’
ঝালকাঠি গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী সমরজিৎ সিং বলেন, গত সপ্তাহে কিছু বরাদ্দ এসেছে। ঠিকাদারকে দ্রুত কাজ শেষ করতে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আমির হোসাইন বলেন, সদর হাসপাতালে বহুতল ভবন নির্মাণ শেষ হলে ময়নাতদন্তের জন্য সেখানকার কোনো কক্ষ বরাদ্দ থাকবে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ও ফ্রিজের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। ডোমের শূন্য পদের শিগগিরই নিয়োগ দেওয়া হবে।