সরু সেতু পার হতে দুর্ভোগ

সেতুর এক পাশে দিয়ে ট্রাক বা বাস উঠলে, বিপরীত পাশ দিয়ে হেঁটে যা্ওয়াও কষ্টকর। সম্প্রতি ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কুমার নদেপ্রথম আলো

সেতুর এক পাশে একটি ট্রাক বা বাস উঠলে, অপর দিক থেকে একটি বাইসাইকেলও পার হতে পারে না। পাটাতনের স্টিলের অনেকগুলো পাতের জোড়া খুলে গেছে। নাটবোল্ট ছুটে গেছে। সংস্কার করতে হয় প্রায়ই। এ অবস্থা ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কুমার নদের ওপরের বেইলি সেতুটির।

ফরিদপুর-মুকসুদপুর সড়কে অবস্থিত সেতুটি ফরিদপুর থেকে নগরকান্দা শহরের প্রবেশদ্বার। এটির দক্ষিণ পাড়ে নগরকান্দা বাজার, উত্তর পাড়ে জুংগুরদী বাসস্ট্যান্ড। নগরকান্দা সদর ও পৌরবাসীর জেলা শহরে যাতায়াতের এটিই একমাত্র মাধ্যম।

নগরকান্দা পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র নিমাই সরকার বলেন, সেতুটির জন্য নগরকান্দা পৌরবাসীর দুর্ভোগের শেষ নেই। জরুরি ভিত্তিতে বেইলি সেতুটি অপসারণ করে একটি পাকা সেতু নির্মাণ করা এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, ১৯৯১ সালে নির্মিত সেতুটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এটি প্রায়ই জোড়াতালি দিয়ে সংস্কার করতে হয়। ২৯ বছর আগে ১০ ফুট প্রস্থের সেতুটি মানানসই হলেও বর্তমানে ১৮ ফুট প্রস্থ সড়কে একেবারেই বেমানান। একটি ট্রাক বা বাস এক পাশ দিয়ে সেতুতে উঠলে অপর দিক থেকে আসা একটি বাইসাইকেলও পার হতে পারে না। এ কারণে সেতুটি ঘিরে প্রতিনিয়ত যানজট তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার নগরকান্দায় হাট বসে। এ দুই দিন সেতু ও এর আশপাশের এলাকায় যানজট ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। তাঁরা এ স্থানে দ্রুত বড় সেতু চান।

নগরকান্দা পৌরসভার চৌমুখা মহল্লার বিচিত্রা সরকার বলেন, ‘সেতুটি পার হতে গিয়ে একবার বড় একটি ট্রাক উঠে পড়ে। তখন এটি প্রায় আমাকে চাপা দেওয়ার উপক্রম হয়। সেতুর রেলিংয়ে মিশে দাঁড়িয়ে কোনোরকমে রক্ষা পেয়েছিলাম। সেতুটি প্রশস্ত হলে এ সমস্যায় পড়তে হতো না।’

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের দিকে সেতুর উত্তর পাশে সড়ক বিভাগ পাঁচ টনের বেশি মালামাল নিয়ে ভারী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দুটি সতর্কীকরণ ব্যানার টাঙিয়ে দেয়। তবে এই সতর্কবার্তা তোয়াক্কা না করে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে ১৫ থেকে ২০ টন মালামাল নিয়েও ট্রাক এই সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করছে।

সম্প্রতি ফরিদপুর সড়ক বিভাগ কোনো সংস্কার না করেই সেতুর দক্ষিণ পাশে সাত টনের বেশি মালামাল পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সতর্কীকরণ ব্যানার টাঙিয়েছে। সাত বছর আগে যে সেতুতে পাঁচ টনের বেশি ওজনের পরিবহন চলাচল নিষেধ ছিল, সেখানে সম্প্রতি সেতুর বড় ধরনের মেরামত না করেই সেতুর ধারণক্ষমতা দুই টন বাড়ানোর বিষয়টি এলাকাবাসীকে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

সেতুটির দক্ষিণ পাড়ে নগরকান্দা বাজারের মেসার্স মোল্লা ট্রেডার্সের পরিচালক অয়ন মুন্না বলেন, সেতুটিতে মাঝেমধ্যে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটে। সেতুটির পাদদেশের স্টিল খসে ফাঁকা জায়গা তৈরি হওয়ায় অনেক সময় মোটরসাইকেলের চাকা আটকে যায়।

এ সড়কে ২০ বছরের বেশি সময় ধরে ভ্যান চালান সুশীল মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘সেতুটির জোড়াতালির কাজ প্রায় প্রতি মাসেই হয়। কয়েকবার মাপামাপি করতে দেখলেও পাকা সেতু হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি না।’

সেতুটি পার হয়েই সরকারি এম এন একাডেমি, ইসলামি আদর্শ শিশু শিক্ষালয়, শহীদ আকরামুন্নেসা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, নগরকান্দা মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়, নগরকান্দা সরকারি কলেজ, আইডিয়াল উচ্চবিদ্যালয়, ক্যাপ্টেন এস আলী মাল্টিমিডিয়া মদিনাতুল-উলুম মাদ্রাসাসহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় চার হাজার ছাত্রছাত্রীকে যাতায়াত করতে হয়।

যখন এই সেতু দিয়ে বড় গাড়ি পার হয়, তখন সেতু এমনভাবে দোলে, মনে হয়, ভেঙে পড়বে। আমরা আতঙ্ক নিয়ে সেতুটি পার হই।
রুদ্র রনি , জুংগুরদী গ্রামের বাসিন্দা ও নগরকান্দা সরকারি কলেজের ছাত্র

স্থানীয় লোকজন বলেন, সেতুটি যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে। তখন জেলা শহরের সঙ্গে নগরকান্দা, সালথা ও গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার সড়ক যোগাযোগ একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। এ জন্য তাঁরা দ্রুত এখানে পাকা সেতু নির্মাণের দাবি জানান।

জানতে চাইলে ফরিদপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খ ম নকিবুল বারী বলেন, নগরকান্দায় বেইলি সেতুর জায়গায় একটি আরসিসি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক বিভাগ। এই সেতুর সঙ্গে গোপালগঞ্জ ও শরীয়তপুরের দুটি সেতু মিলে মোট তিনটি সেতু একটি প্যাকেজে নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর সারা দেশে সড়ক বিভাগের প্রতিটি বেইলি সেতুই সাত টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন। এ জন্য এখানে পাঁচ টনের স্থলে সাত টন লেখা হয়েছে।