সাঁওতাল হত্যার বিচার ও ইপিজেড নির্মাণ না করার দাবিতে সড়ক অবরোধ

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর আঞ্চলিক সড়কের গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটামোড় এলাকা অবরোধ করে ইপিজেড নির্মাণ বন্ধ এবং তিন সাঁওতাল হত্যার বিচারের দাবি জানানো হয়। বৃহস্পতিবার সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি এই কর্মসূচির আয়োজন করে
ছবি: প্রথম আলো

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর আঞ্চলিক সড়কের গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটামোড় এলাকায় আজ বৃহস্পতিবার সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন সাঁওতালরা। তিন সাঁওতাল হত্যার বিচার ও ইপিজেড নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে বেলা তিনটা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী তাঁরা এই কর্মসূচি পালন করেন। সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি এই কর্মসূচির আয়োজন করে।

এর আগে পতাকা, ফেস্টুন ও ব্যানার হাতে উপজেলার মাদারপুর ও জয়পুর গ্রাম থেকে মিছিল নিয়ে দুই শতাধিক সাঁওতাল নারী-পুরুষ কর্মসূচিতে অংশ নেন। এ সময় রাস্তার দুই পাশে শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সাঁওতালদের দাবি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর আশ্বাস দিলে সাঁওতালরা অবরোধ তুলে নেন।

কর্মসূচি চলাকালে সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম মাস্টার, সহসাংগঠনিক সম্পাদক সুফল হেমব্রম, সদস্য প্রিসিলা মুরমু, ব্রিটিশ সরেন প্রমুখ বক্তৃতা করেন।

বক্তারা বলেন, তিন সাঁওতাল হত্যার বিচারের দাবিতে তাঁরা পাঁচ বছর ধরে আদালতসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেছেন। কিন্তু সবাই বিচারের নামে শুধু টালবাহানা করছে। সাঁওতাল হত্যা মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁদের কেউ গ্রেপ্তার করে না। এ নিয়ে সাঁওতালদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিভিন্ন সময়ে দেশে ছোট ঘটনাগুলোও সংশ্লিষ্টদের নজরে এলে তার দ্রুত বিচার হয়। আর সাঁওতাল হত্যার ঘটনা দেশ-বিদেশে তোলপাড় হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের টনক নড়ে না। কারণ, এখানে একটি স্বার্থান্বেষী মহল কাজ করছে। এ সময় বক্তারা সরকারের প্রতি তিন সাঁওতাল হত্যায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচার এবং জমি ফেরত, বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, লুটপাট, ক্ষতিপূরণসহ সাত দফা বাস্তবায়নের দাবি জানান।

গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি ইজার উদ্দিন বলেন, সাঁওতালদের দাবিগুলো প্রশাসনের উচ্চ মহলে জানানোর আশ্বাস দিলে তাঁরা অবরোধ তুলে নেন। এরপর যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ এলাকায় রংপুর চিনিকলের জমিতে ইপিজেড স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (বেপজা) কর্তৃপক্ষকে ইপিজেড নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এদিকে চিনিকলের জমিতে ইপিজেড নির্মাণের বিরোধিতা করে সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি। তখন থেকে ওই কমিটির উদ্যোগে ইপিজেড না নির্মাণ করার দাবিতে আন্দোলন চলছে। তারা চিনিকলের জমিকে বাপ-দাদার সম্পত্তি দাবি করে তা ফেরত দেওয়া জন্য এই কমিটি গঠন করে।

রংপুর চিনিকল সূত্র জানায়, সাহেবগঞ্জ এলাকায় রংপুর চিনিকলের আওতায় ১ হাজার ৮৪২ একর জমি আছে। এই জমিতে উৎপাদিত আখ রংপুর চিনিকলে মাড়াই হতো। ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ এসব জমি দখল করতে গেলে সাঁওতালদের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ হয়। এতে ৩ সাঁওতাল নিহত ও অন্তত ২০ জন আহত হন। এরপর থেকে সাঁওতালরা দফায় দফায় এই জমি দখল করেন। এ পরিস্থিতিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বেপজা সাহেবগঞ্জ এলাকায় ইপিজেড স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু স্থানীয় সাঁওতালরা এখানে ইপিজেড না করার জন্য আন্দোলন করছেন।