সাংসদের ভাইসহ আ.লীগের ২৯ ‘বিদ্রোহী’

নির্বাচন
প্রতীকী ছবি

পাবনার সুজানগর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) চেয়ারম্যান পদে দলীয় ১০ প্রার্থীর পাশাপাশি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের ২৯ ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী। তাঁদের মধ্যে আছেন উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নে পাবনা-২ (বেড়া-সুজানগর) আসনের সাংসদ আহম্মেদ ফিরোজ কবিরের ছোট ভাই ফেরদৌস কবির।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপে আগামী ১১ নভেম্বর উপজেলার ১০ ইউপিতে নির্বাচন হবে। সে অনুযায়ী গতকাল রোববার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল। এদিন ১০ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে মোট ৪৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ১০, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ৪ এবং জাতীয় পার্টি ও জাকের পার্টির একজন করে প্রার্থী আছেন। স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করছেন বিএনপির এক নেতা। বাকি ২৯ জনই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এ ছাড়া সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৯৯ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৩৮৮ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

সাতবাড়িয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম শামসুল আলম। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন পাবনা-২ (বেড়া-সুজানগর) আসনের সাংসদ আহম্মেদ ফিরোজ কবিরের ছোট আহমেদ ফেরদৌস কবির এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা আবুল হোসেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাংসদ আহম্মেদ ফিরোজ কবির বলেন, ‘ভাই হলেও তাঁর (ফেরদৌস) সঙ্গে আমাদের পারিবারিক কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি নিজের মতো থাকেন। নিজের মতো চলেন। এ বিষয়ে আমাদের পরিবারের কিছু বলার নেই।’

সাগরকান্দি ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহীন চৌধুরী। তাঁর বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন তিনজন। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগ নেতা তৈয়ব আলী, টিপু সুলতান ও খান মোহাম্মদ গোলাম রসূল। এ ছাড়া ইউনিয়নটিতে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন থেকে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন মো. জাকের হোসেন।

রাণীনগরে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জি এম তৌফিকুল আলম। তাঁর বিপক্ষে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা টুটুল কাজী। এ ছাড়া ইউনিয়নটিতে জাতীয় পার্টি থেকে আবু তালেব, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন থেকে থেকে সৈয়দ আলী বিশ্বাস ও জাকের পার্টির মকবুল হোসেন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

আহম্মদপুরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন মিয়া দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁর বিপক্ষে আওয়ামী চার বিদ্রোহী এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আবদুল বাসেত মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা হলেন স্বপন মিয়া, মো. হিরা, মাজহারুল ইসলাম ও আশরাফুল আলম।

দুলাই ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সিরাজুল ইসলাম দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন দলের আরও চারজন। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদ, সাইফুল ইসলাম, সাইদুর রহমান ও গোলাম মোরশেদ।

হাটখালীতে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক আবদুর রউফ দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁর বিপক্ষে নির্বাচনে লড়তে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান বিশ্বাস এবং আওয়ামী লীগ নেতা আজাহার আলী শেখ, কাজী মোজাম্মেল হোসেন, ওমর ফারুক বিশ্বাস, ফজলুল হক ও ফিরোজ আহমেদ খান।

নাজিরগঞ্জ ইউপি দলীয় মনোনয়ন জমা দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক মো. মশিউর রহমান। তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন চারজন। তাঁরা হলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সাত্তার প্রামাণিক এবং আওয়ামী লীগ নেতা নূর মোহাম্মদ, টিপু আলী মুন্সী ও আবদুল হামিদ শেখ। এ ছাড়া ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন থেকে রয়েছেন আবদুস সাত্তার।

তাঁতীবন্দ ইউপিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল মতিন মৃধা দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রজ্জাক খান। স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নেতা শেখ আবদুর রউফ।

ভাঁয়নায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিন উদ্দিন দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা ওমর ফারুক।

মানিকহাটে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিউল ইসলাম দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা এ এস এম আমিনুল ইসলাম, মজিবর রহমান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্বাস আলী মল্লিক।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বড় দলে বেশি মানুষ মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন। তবে আমরা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগকে সব অবগত করেছি। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

২০ অক্টোবর মনোনয়নপত্র বাছাই ও ২৬ অক্টোবর প্রত্যাহারের শেষ দিন। ১১ নভেম্বর ১০টি ইউনিয়নে ভোট হবে।