সাগরের তীরে বসে সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে ইফতার
শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের কলাতলী পয়েন্টে ধু ধু বালুচরে চলছে ইফতারের প্রস্তুতি। ছোলা, খেজুর, বেগুনি, শরবত, হালিম, কী নেই আয়োজনে! পশ্চিম আকাশে তখন লাল আভা ছড়িয়ে ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছে সূর্য। সৈকতের ভেজা বালুচরে চেয়ারে বসে কিছু পর্যটক সূর্যাস্ত উপভোগ করছেন। সারা দিনের প্রচণ্ড গরমের পর ধীরে ধীরে বইছে হাওয়া, সমুদ্রের গর্জনও তীব্র হচ্ছে। এমন পরিবেশে ইফতার কয়জনের ভাগ্যে জোটে?
সৈকতের বালুচরে ইফতারের এমনই আয়োজন করেছেন শহরের টেকপাড়ার ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম (৪৫)। পরিবারের পাঁচ সদস্য ছাড়াও ইফতারে যোগ দেন আরও পাঁচ থেকে ছয়জন অতিথি। ইফতারসামগ্রীর মধ্যে বাড়ি থেকে আনা ছোলা, মুড়ি, বেগুনি, পেঁয়াজুর সঙ্গে সৈকতের আশপাশের রেস্তোরাঁ থেকে শরবত, জিলাপি, মরিচা ও হালিম আনা হয়েছে।
‘সারা জীবন বাড়িতেই ইফতার করেছি। করোনার দুই বছর সৈকতে নামা যায়নি। ঘরে বসে সীমিত পরিসরে ইফতার করতে হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তাই পরিবার নিয়ে উন্মুক্ত পরিবেশে চলে এলাম। সমুদ্রের গর্জনকে সঙ্গে নিয়ে সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে ইফতার সেরে নেওয়ার আনন্দ অন্য রকম।’
সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারা জীবন বাড়িতেই ইফতার করেছি। করোনার দুই বছর সৈকতে নামা যায়নি। ঘরে বসে সীমিত পরিসরে ইফতার করতে হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তাই পরিবার নিয়ে উন্মুক্ত পরিবেশে চলে এলাম। সমুদ্রের গর্জনকে সঙ্গে নিয়ে সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে ইফতার সেরে নেওয়ার আনন্দ অন্য রকম।’
কলাতলী সৈকতের বালুচরে কাঠ দিয়ে নৌকার আদলে তৈরি হয়েছে বিশাল এক রেস্তোরাঁ। নাম সি-ল্যান্ড। বিকেলে অনেকেই এই রেস্তোরাঁয় ইফতার করতে জড়ো হন। রেস্তোরাঁয় বসে অর্ডার করা রকমারি ইফতারি নেওয়ার রেওয়াজ আগে চোখে পড়েনি। এবার রোজায় মানুষ ইফতারসামগ্রী নিয়ে সৈকতে চলে আসছেন। কেউ কেউ পরিবার-পরিজন, অতিথি ও প্রিয়জনদের নিয়ে সৈকতে ইফতার করছেন।
সি-ল্যান্ড রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক মো. ফাইজুল প্রথম আলোকে বলেন, এবারের রোজায় ইফতারের জন্য মানুষ সৈকতে আসছেন। তাঁদের নৌকার রেস্তোরাঁয় প্রতিদিন ইফতার সারছেন অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন। চাহিদামতো ইফতারসামগ্রী তাঁরা সরবরাহ করছেন। আবার কেউ কেউ বাড়ি থেকে ইফতারি নিয়ে এসে উন্মুক্ত বালুচরে বসে ইফতার করছেন।
বিকেলে সৈকতের ডায়াবেটিক হাসপাতাল, সুগন্ধা, কলাতলী, কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের সড়কের কয়েকটি অংশে দেখা গেছে, ১০ থেকে ১৫ জনের একাধিক পারিবারিক ও সাংগঠনিক দল সৈকতের বালুচরে ইফতার করছেন। অনেকে সৈকতের তীরের আশপাশের রেস্তোরাঁয় বসে সমুদ্রের গর্জন ও সূর্যাস্ত উপভোগ করতে করতে ইফতার সেরে নিচ্ছেন।
কলাতলী হাঙর ভাস্কর্য মোড়ের একটি রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন বলেন, বিকেল চারটার পর বিভিন্ন এলাকার লোকজন রেস্তোরাঁয় এসে রকমারি ইফতারি কিনে নিয়ে সৈকতে যাচ্ছেন। শহরের বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকেও স্থানীয় বাসিন্দারা ইফতারসামগ্রী নিয়ে সৈকতে নামছেন, যা আগের পাঁচ থেকে ছয় বছরে দেখা যায়নি। ভবিষ্যতে সৈকতকেন্দ্রিক ইফতারে আগ্রহ ও চাহিদা, দুটিই বেড়ে যাবে।
কলাতলী-মেরিন ড্রাইভ হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান প্রথম আলোকে বলেন, আগের তুলনায় এখন সমুদ্রের আশপাশে রেস্তোরাঁর সংখ্যা বাড়ছে। পর্যটকসহ স্থানীয় লোকজনের চাহিদা পূরণে রেস্তোরাঁগুলোয় ঘরোয়া পরিবেশে ইফতারসামগ্রী পরিবেশনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সমুদ্রের বালুচরে কিংবা রেস্তোরাঁয় বসে খোলা হাওয়ায় ইফতার সারতে কার না ভালো লাগে।
সৈকত এলাকার রেস্তোরাঁগুলো ঘুরে দেখা গেছে, রেস্তোরাঁয় ১৫ থেকে ১৭ ধরনের ইফতারসামগ্রী ৩০০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সৈকত লাগোয়া পাঁচ তারকা হোটেলে এসব ইফতারসামগ্রী সর্বোচ্চ ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার সৈকতের আশপাশের রেস্তোরাঁগুলোয় ১০০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যেও ইফতারি পাওয়া যাচ্ছে।
কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম বলেন, সমিতির আওতায় শহরে ১২০টি রেস্তোরাঁ আছে। পবিত্র রমজান উপলক্ষে রেস্তোরাঁগুলো বন্ধ রাখা হলেও পর্যটক ও স্থানীয় লোকজনের চাহিদা পূরণে ১০ থেকে ১২টি রেস্তোরাঁ খোলা আছে। তবে ঘুরতে আসা পর্যটকদের জন্য তারকা মানের হোটেলের রেস্তোরাঁ খোলা রাখা হয়। পাশাপাশি সৈকত এলাকায় অসংখ্য রেস্তোরাঁয় ইফতারসামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয় লোকজনও বাসাবাড়ি থেকে ইফতারসামগ্রী নিয়ে সমুদ্রমুখী হচ্ছেন, যা আগে চোখে পড়েনি। এটি ভালো লক্ষণ।