গত সোমবার চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার নলুয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সহিংসতা চলাকালে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মো. তাসিব (১৩) নামের সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। আজ বুধবার বিকেলে তাসিবের বাবা মো. জসিম উদ্দিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে এ মামলা করেন। সাতকানিয়া থানা-পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) সুজন কুমার দে প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার সপ্তম ধাপে সাতকানিয়ার ১৬টি ইউপি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হয়। উপজেলার নলুয়া, বাজালিয়া, চরতী, কাঞ্চনা, সোনাকানিয়া ও খাগরিয়া ইউপি নির্বাচনের দিন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কর্মী-সমর্থক ও বিদ্রোহী-স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলি, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সোমবার বেলা ১১টার দিকে নলুয়া ইউনিয়নে বাড়ির কাছের বোর্ড অফিস ভোট কেন্দ্রের পাশে দাঁড়িয়ে ভোটার আসা-যাওয়া দেখছিল সপ্তম শ্রেণির ছাত্র মো. তাসিব। তখন আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী (নৌকা প্রতীক) মো. লেয়াকত আলীর কর্মী-সমর্থকেরা লাঠিসোঁটা ও দা-কিরিচ নিয়ে ভোটকেন্দ্রের দিকে তেড়ে আসেন। এ সময় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর (আনারস প্রতীক) কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে নৌকার লোকজন কিশোর তাসিবকে প্রতিপক্ষের কর্মী মনে করে কিরিচ দিয়ে গলায় ও মাথায় কোপ দেন। পরে স্থানীয় লোকজন তাসিবকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নৌকার লোকজন কিশোর তাসিবকে প্রতিপক্ষের কর্মী মনে করে কিরিচ দিয়ে গলায় ও মাথায় কোপ দেন।
নিহত তাসিবের বাবা মো. জসিম উদ্দিন আজ বিকেলে সাতকানিয়া থানার সামনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ভোটের দিন সকাল থেকে নৌকার প্রার্থীর ভোটারদের রিকশায় করে কেন্দ্রে আনা-নেওয়া করছিলাম। বেলা ১১টার দিকে একজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর সশস্ত্র কর্মী-সমর্থক ভোটকেন্দ্রে এলে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় এক পক্ষ কিরিচের কোপ দিয়ে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। কারা হত্যা করেছে আমি দেখিনি। তাই অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেছি। আশা করছি, পুলিশ আমার ছেলেকে হত্যায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করবে। আমি আমার ছেলের হত্যাকারীদের ফাঁসি দেখতে চাই।’
সাতকানিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুজন কুমার দে বলেন, নির্বাচনী সহিংসতায় কিশোর তাসিব নিহত হওয়ার ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ৭০-৮০ জন লোক মিছিল নিয়ে ভোটকেন্দ্রের দিকে আসেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। মিছিল নিয়ে আসা লোকদের মধ্যে একজন কিশোর তাসিবের গলায় ও মাথায় কিরিচের কোপ দেন। এতে তাসিবের মৃত্যু হয়।
সুজন কুমার দে আরও বলেন, তাসিব হত্যা মামলায় আসামি অজ্ঞাত করা হলেও ইতিমধ্যে পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। তা ছাড়া বাজালিয়া ইউপিতে নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত শুক্কুরের স্বজনেরা মামলা করতে আসছেন বলে তিনি জানান। ভোটের দিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাজালিয়া ইউপির ২ নম্বর ওয়ার্ডের বোর্ড অফিস কেন্দ্রে গুলিতে নিহত হন আবদুস শুক্কুর (৪০)। তিনি বহিরাগত হলেও নৌকার প্রার্থী তাপস কান্তি দত্তের পক্ষে ভোট করার জন্য বাজালিয়ায় এসেছিলেন।