সাতক্ষীরায় অক্সিজেন সিলিন্ডার না আনতে পারায় বাবার মৃত্যু

ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই সুভাষ চন্দ্র সরদার
ছবি: সংগৃহীত

সাতক্ষীরায় অসুস্থ বৃদ্ধ বাবার জন্য খালি সিলিন্ডার নিয়ে অক্সিজেন আনতে যাচ্ছিলেন ছেলে। পথে শহরের ইটাগাছা হাটের মোড়ে পুলিশ ছেলেকে দেড় ঘণ্টা আটকে রাখে। এতে সঠিক সময়ে অক্সিজেন দিতে না পারায় বাবা মারা গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সাতক্ষীরা শহরের ইটাগাছা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ সুপারের নির্দেশে সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সুভাষ চন্দ্র সরদারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার এ ঘটনায় তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, পিপিএম (বার)।

অক্সিজেনের অভাবে মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম  রজব আলী মোড়ল (৬৫)। তিনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈচনা গ্রামের বাসিন্দা।

এ বিষয়ে রজব আলীর ছেলে ওলিউল ইসলাম জানান, কয়েক দিন ধরে করোনা উপসর্গসহ অন্যান্য রোগের চিকিৎসা বাড়িতে নিচ্ছিলেন তাঁর বাবা। বাড়িতেই সিলিন্ডার থেকে তাঁর বাবাকে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছিল। পরে এটি খালি হয়ে যায়। তিনি বৃহস্পতিবার সকালে মোটরসাইকেলে সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল এলাকায় খালি সিলিন্ডার নিয়ে অক্সিজেন আনতে যাচ্ছিলেন। পথে ইটাগাছা হাটের মোড়ে পৌঁছালে তাঁকে থামান ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই সুভাষ চন্দ্র সরদার ।

রজব আলীর ছেলে ওলিউল ইসলাম আরও বলেন, মোটরসাইকেলের কাগজপত্র দেখতে চেয়ে সুভাষ চন্দ্র তাঁর কাছ থেকে চাবি নিয়ে নেন। তিনি তখন তাঁকে তাঁর বাবা অসুস্থ, অক্সিজেন নিতে তাড়াহুড়া করে সাতক্ষীরা এসেছেন এবং এ কারণে কাগজ আনতে ভুলে গেছেন বলে জানান। তারপরও মোটরসাইকেল না ছেড়ে নানাভাবে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। একপর্যায়ে এএসআই সুভাষ চন্দ্র ৫০০ টাকা দিলে মোটরসাইকেল ছেড়ে দেবেন বলে জানান। দাবি করা টাকা দিতে না পারায় তাঁকে প্রায় দেড় ঘণ্টা  সেখানে আটকে রাখা হয়। পরে একজনের মধ্যস্থতায় ২০০ টাকার বিনিময়ে মোটরসাইকেলটি ছেড়ে দেওয়া হয়। তারপর তিনি বাড়ি ফিরে অক্সিজেন দেওয়ার আগেই তাঁর বাবা মারা যান। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, ‘যদি সময়মতো অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বাড়িতে পৌঁছাতে পারতাম, তাহলে হয়তো বাবাকে বাঁচানো যেত।’ তিনি এই  ঘটনার বিচার দাবি করেন।

মোটরসাইকেল আটক রেখে কালক্ষেপণ করার অভিযোগ অস্বীকার করে ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক সুভাষচন্দ্র সরদার  বলেন, বেপরোয়া গতিতে আসছিল মোটরসাইকেলটি। কাগজপত্রও ছিল না। পরে ঘটনা শুনে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মাত্র ৩-৪ মিনিট মোটরসাইকেলটি থামিয়ে রাখা হয়েছিল।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে জানা গেছে অক্সিজেন নিতে আসা ছেলের মোটরসাইকেলটি এএসআই সুভাষ চন্দ্র ৩-৪ মিনিট নয়, কিছুক্ষণ আটকে রেখেছিলেন। বিষয়টির অধিকতর তদন্ত শুরু হয়েছে।’