সাবেক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি দখলচেষ্টার অভিযোগ
চুয়াডাঙ্গার দর্শনা পৌর এলাকার ফুলতলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মজনুর রহমানের শতবর্ষী পৈতৃক বাড়ির সীমানাপ্রাচীর ভেঙে দখলচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে রফিকুল ইসলাম নামে সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় স্থানীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে রফিকুল ইসলামসহ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।
আজ শনিবার দুপুরে দর্শনা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মজনুর রহমান। তিনি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি।
লিখিত বক্তব্যে সৈয়দ মজনুর রহমান অভিযোগ করেন, দর্শনা পৌরসভার ফুলতলা এলাকার ওই পৈতৃক বাড়িতে তাঁরা ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে বংশানুক্রমে বসবাস করে আসছেন। ৩ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দর্শনা পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম দলবল নিয়ে এসে তাঁর বাড়ির পশ্চিম পাশের সীমানাপ্রাচীর ও ঘর ভাঙচুর করেন। এ সময় তাঁরা বাড়ি দখলের চেষ্টা করেন ও ব্যাপক লুটপাট চালান। ঘটনার সময় তিনি ঢাকা থেকে বাসে করে দর্শনায় ফিরছিলেন। তাঁর স্ত্রী ভাঙচুরের প্রতিবাদ করতে গেলে হামলাকারীরা তাঁকে গালাগাল করেন এবং জীবননাশের হুমকি দেন। সৈয়দ মজনুর রহমান তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলি আজগার টগরকে জানান। খবর পেয়ে দর্শনা থানার পুলিশও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এ ঘটনায় ৩ মার্চ সন্ধ্যায় তিনি বাদী হয়ে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে দর্শনা থানায় একটি মামলা করেন।
মামলার আসামিরা হলেন দর্শনা পৌরসভার দক্ষিণ চাঁদপুর এলাকার পলাশ হোসেন, শ্যামপুরের মো. শিমুল, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম ও মো. বাপ্পা এবং ইসলাম বাজার এলাকার রাজীব (৪৫)।
লিখিত বক্তব্যে সৈয়দ মজনুর রহমান বলেন, তাঁরা তিনভাইসহ তাঁদের পরিবারে ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা, যাঁদের মধ্যে ২ জন নারী। তাঁরা তিনভাই বাড়িটির শরিক।
৮০ বছর বয়সী সৈয়দ মজনুর রহমান আক্ষেপ করে বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও নিজের বসতবাড়িতে নিরাপদে থাকতে পারছি না। স্বাধীনতাসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম কি এমন একটি দেশ দেখার জন্য? জীবন সায়াহ্নে এমন দিন আসবে স্বপ্নেও ভাবিনি। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা এখনো আমাকেসহ পরিবারের সদস্যদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। এ ঘটনায় বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছি।’
সংবাদ সম্মেলনে দর্শনা সরকারি কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা আনসার আলী, মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই উপজেলা কমিটির চেয়ারম্যান রুস্তম আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন, রেজাউল করিম ও বদরুল আলম, সিপিবির জেলা সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম ও যুগ্ম সম্পাদক কাজল মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে মামলার আসামিদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য দর্শনায় গিয়ে তাঁদের পাওয়া যায়নি। তাঁদের মুঠোফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া গেছে। এ কারণে মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি দখলচেষ্টার অভিযোগের বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লুৎফুল কবীর বলেন, মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।