সাবেক স্ত্রী সুমি বেগমকে (৩৩) ফেরত পেতে চেয়েছিলেন রংপুরের পীরগাছার মিজান মিয়া (৩৫)। এ জন্য একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টাও করেন মিজান। কিন্তু তাঁদের যোগাযোগে বাধা হয়ে দাঁড়ান সুমির বড় ভাই রোকন মিয়া (৪৮)। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রোকন মিয়াকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। একই সময়ে মিজান মিয়া সাবেক স্ত্রী সুমিকেও ছুরিকাঘাত করেছেন। এরপর সুমির বাড়িতে গিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন মিজান। সর্বশেষ নিজেও বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার কৈকুড়ী ইউনিয়নের মকরমপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। আজ মঙ্গলবার সকালে নিহতের ভাই বাদী হয়ে পীরগাছা থানায় মামলা করেছেন। এর আগে গতকাল রাতেই পুলিশ মিজান মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে। মিজান বর্তমানে পুলিশি হেফাজতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। একই হাসপাতালে গুরুতর আহত অবস্থায় সুমিও ভর্তি।
বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর মিজান বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
মিজান উপজেলার কৈকুড়ী ইউনিয়নের সুবিদ গ্রামের দুদু মিয়ার ছেলে। আর রোকন মিয়া ওই গ্রামের তয়েজ উদ্দিন মাস্টারের ছেলে। সাত বছর আগে রোকনের বোনের সঙ্গে সুমির বিয়ে হয়। বিয়ের চার বছর পর তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, কিছুদিন ধরে সাবেক স্ত্রীকে ফিরে পেতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেন মিজান, কিন্তু রোকন মিয়া বাধা দিলে মিজান সুমিকে ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হন। এর মধ্যে গতকাল সন্ধ্যায় উপজেলার চৌধুরানী বাজার থেকে সুমি ও রোকন বাড়ির উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। এ সময় মকরমপুর সড়কের কাছে পৌঁছালে মিজান তাঁদের পথ রোধ করে ছুরিকাঘাতে সুমি ও রোকনকে আহত করেন।
এরপর মিজান তাঁর সাবেক শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। এতে বাড়ির মালামাল পুড়ে গেছে। এ সময় ওই বাড়িতে সুমির মা ফিরোজা বেগম ও সুমির বড় ভাই তৌহিদুর রহমান ছিলেন। বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর মিজান বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরেস চন্দ্র বলেন, এ ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মিজানকে উদ্ধার করে পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়। এদিকে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত সুমি ও রোকনকে স্থানীয় ব্যক্তিরা উদ্ধার করে আগেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক নাহিদুজ্জামান তালুকদার ছুরিকাঘাতে আহত রোকনকে মৃত ঘোষণা করেন।
নাহিদুজ্জামান তালুকদার বলেন, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই রোকনের মৃত্যু হয়েছে। আর বিষপান করায় মিজানের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
ওসি সরেস চন্দ্র প্রথম আলোকে বলেন, মিজানের কাছ থেকে একটি রক্তমাখা ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশি পাহারায় মিজান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আজ সকালে সুমির ভাই তৌহিদুর রহমান মিজানকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন।