সারিয়াকান্দিতে যমুনার পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই, বন্যার শঙ্কা

বগুড়ায় যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দুশ্চিন্তায় চরাঞ্চলের কৃষকেরা। ছবিটি গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে কাইজার চর এলাকা থেকে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

উজানে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিতে বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। সারিয়াকান্দি উপজেলার মথুরাপাড়া পয়েন্টে ৪৮ ঘণ্টায় ৮৭ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল ৯টায় নদীর পানি বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আজ সন্ধ্যার মধ্যে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

এদিকে যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকা ও চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে পাট, আউশ, সবজি, বীজতলা, মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের খেত। বসতবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় চরাঞ্চলের বাসিন্দারা সহায় সম্বল নিয়ে আশ্রয়ের খোঁজে পার্শ্ববর্তী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ উঁচু জায়গায় ছুটছেন। নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে প্রবল ভাঙনে দিশাহারা চরাঞ্চলের মানুষ।

পাউবোর বগুড়া কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, যমুনা নদীর সারিয়াকান্দি পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয় ১৬ দশমিক ৭০ মিটার। আজ সকাল ৯টায় পানি প্রবাহিত হয়েছে ১৬ দশমিক ৪৭ মিটার ওপর দিয়ে। গত বুধবার সকাল ৯টায় ১৫ দশমিক ৬০ মিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। ৪৮ ঘণ্টায় যমুনায় ৮৭ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় পানি আরও বেড়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে শঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

জানা গেছে, যমুনা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়াবাড়ি, হাটশেরপুর (আংশিক), কাজলা, কর্নিবাড়ি, বোহাইল ইউনিয়নের চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। তলিয়ে গেছে শত শত বিঘার আউশ, পাটসহ বিস্তীর্ণ ফসলের খেত। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে নদী তীরবর্তী এলাকায় প্রবল ভাঙন দেখা দিয়েছে।

যমুনার ঢলে দিশেহারা চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নের আউচারপাড়া, উত্তর শিমুলতাইড়, চর দলিকা, হাটবাড়ি, খাটিয়ামারি, কাশিরপাড়া, সুজনেরপাড়া, চর নোয়ারপাড়া, বিরামের পাঁচগাছি, ভাঙ্গুরগাছা চরের হাজারো মানুষ। যমুনার ঢলে বাড়িঘর ও ফসল নিমজ্জিত হওয়ায় সহায় সম্বল নিয়ে লোকজন আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন। অনেকে বসতবাড়িতে উঁচু মাচান তৈরি করে সেখানে চাল-ডাল নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।

হাটবাড়ি চরের বাসিন্দা রাজ্জাক শেখ প্রথম আলোকে বলেন, যমুনার ঢলে বসতবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। পানি বেড়ে যাওয়ায় গরু-ছাগল নিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।

আরও পড়ুন

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, যমুনা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় বন্যার শঙ্কায় বেশ কয়েকটি চরের অনেক পরিবার গরু-বাছুর, বিছানা-বালিশ, মালামাল নিয়ে চরের লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটোছুটি করছেন। এ ছাড়া কামালপুর ও চন্দনবাইশা ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপারের রহদহ, ইছামারা, চন্দনবাইশা, নিজ চন্দনবাইশা, ঘুঘুমারি, শেখপাড়া, ফকিরপাড়া, আকন্দপাড়া, শাকদহ, তালুকদার পাড়াসহ কয়েকটি গ্রামে পানি ঢুকে পড়ছে। এসব গ্রামের লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে গরু-ছাগল নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিচ্ছেন।