সালথার ৮ ইউপিতে আ.লীগের ১৫ ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী
ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় আটটি ইউনিয়ন। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী রয়েছে। এই আটটি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ করা হবে দ্বিতীয় ধাপে আগামী ১১ নভেম্বর। গতকাল রোববার ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন।
এই ৮ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে মোট ৫৩ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন জমাদানকারী এই প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনীত (নৌকা প্রতীক) আট প্রার্থী ছাড়াও জাকের পার্টির মনোনীত প্রার্থী আছেন তিনজন। বাকি ৪২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে ১৫ জনই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী, যাঁদের নাম তৃণমূল থেকে কেন্দ্রের কাছে পাঠানো তালিকায় ছিল। কোনো কোনো ইউনিয়নে দুই থেকে চারজন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন।
আটঘর ইউপিতে নৌকার মনোনীত প্রার্থী শহিদুল ইসলাম খান ওরফে সোহাগ। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন চারজন। তাঁরা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম ও কর্মসংস্থানবিষয়ক সম্পাদক হারুন আর রশীদ, উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি মো. ফখরুজ্জামান ওয়াসিম, আটঘর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রাইছুল ইসলাম এবং আওয়ামী লীগের কর্মী মো. শাহজাহান।
রামকান্তপুর ইউপিতে নৌকার মনোনীত প্রার্থী আশরাফ আলী। এ ইউনিয়নে তিনজন বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। তাঁরা হলেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইমারত হোসেন ওরফে পিকুল, উপজেলা কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসারত হোসেন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন।
যদুনন্দী ইউপিতে নৌকার মনোনীত প্রার্থী আবদুর রব মোল্লা। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন দুজন। তাঁরা হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান ওরফে টুকু ঠাকুর এবং আওয়ামী লীগের কর্মী কামরুজ্জামান মোল্লা।
৪২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে ১৫ জনই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী, যাঁদের নাম তৃণমূল থেকে কেন্দ্রের কাছে পাঠানো তালিকায় ছিল। কোনো কোনো ইউনিয়নে দুই থেকে চারজন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন।
ভাওয়াল ইউপিতে নৌকার মনোনীত প্রার্থী ফারুকুজ্জামান ফকির মিয়া। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন দুজন। তাঁরা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন এবং ভাওয়াল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল ওহাব।
মাঝারদিয়া ইউপিতে নৌকার মনোনীত প্রার্থী আফছার উদ্দীন। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন একজন। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম মিয়া।
গট্টি ইউপিতে নৌকার মনোনীত প্রার্থী হাবিবুর রহমান। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার রেজাউর রহমান।
বল্লভদী ইউপিতে নৌকার মনোনীত প্রার্থী নুরুল ইসলাম। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি শাহিনুজ্জামান।
সোনাপুর ইউপিতে নৌকার মনোনীত প্রার্থী খায়রুজ্জামান ওরফে বাবু। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের কর্মী সোহেল রানা।
আওয়ামী লীগ মনোনীত একাধিক প্রার্থী অভিযোগ করে বলেন, প্রতিটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। যে কারণে তাঁরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন, বিপাকেও পড়েছেন।
গট্টি ইউপিতে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার রেজাউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি জানি, বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় আমার পদ কেড়ে নেওয়া হতে পারে। তাতে আমার কিছু আসে যায় না। বঙ্গবন্ধু আমার বুকে, শেখ হাসিনা আমার হৃদয়ে, সাজেদা চৌধুরী আমার অন্তরে। আমার জন্ম আওয়ামী লীগ পরিবারে। আমার বাবা ও দাদা মিলে প্রায় শত বছর এ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান ছিলেন। তাই আমি দাঁড়াব না! দাঁড়াবে অন্যজন! নির্বাচন নিরপেক্ষ হলে আমার জয় সুনিশ্চিত।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন মিয়া বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের শেখ হাসিনার নৌকার বিপক্ষে কাজ করার সুযোগ নেই। সব নেতা-কর্মীদের দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আর যাঁরা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে নির্দেশনা পেলে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. তেলায়েত হোসেন বলেন, ৮টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে মোট ৫৩ জন, সাধারণ সদস্য পদে ২৪৫ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৯৫ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। ২১ অক্টোবর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই, ২৬ অক্টোবর প্রত্যাহারের শেষ দিন, ২৭ অক্টোবর প্রতীক বরাদ্দ এবং ১১ নভেম্বর ৮টি ইউপির ৭৬ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই ৮টি ইউনিয়ন মোট ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ২৯ হাজার ৬৭৫। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬৭ হাজার ৬৬ জন এবং নারী ভোটারের সংখ্যা ৬২ হাজার ৬০৯।