সালিসের মীমাংসা না মেনে মামলা, ভুক্তভোগীর পরিবারকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ
ধর্ষণের অভিযোগে এক নারীর করা মামলা তুলে নিতে তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীর পরিবার বলছে, সালিসের মাধ্যমে ৬০ হাজার টাকায় বিষয়টি মীমাংসা করতে বলা হয়েছিল। এতে রাজি না হয়ে ধর্ষণের মামলা করেছে তাঁরা। সেই থেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এলাকাছাড়া করার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগীর পরিবার।
ঘটনাটি ঘটেছে নওগাঁর মান্দা উপজেলায়। ধর্ষণের ঘটনা জোর করে আপস মীমাংসার চেষ্টা এবং মামলা তুলে নিতে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে ওই নারীর মেয়ে বাদী হয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানসহ আটজনের বিরুদ্ধে গতকাল রোববার মান্দা থানায় অভিযোগ করেন।
ভুক্তভোগীর পরিবার ও লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ইউপির ৪০ দিনের কর্মসূচিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন ওই নারী (৪৫)। সেখানে ৪৮ বছর বয়সী এক পুরুষের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। বিয়ের কথা বলে ওই ব্যক্তি গত ২৪ মার্চ নিজের বাড়িতে ও ৩০ মার্চ এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ওই নারীকে ধর্ষণ করেন। পরে ওই নারীকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান ওই ব্যক্তি।
এ ঘটনা জানাজানি হলে ১৯ এপ্রিল ওই নারী ও তাঁর মেয়েকে কৌশলে ইউপি কার্যালয়ে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে সালিস বৈঠক বসানো হয়। বৈঠকে ইউপি চেয়ারম্যান ছাড়াও স্থানীয় কয়েকজন মাতবরসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। সালিসে ওই নারী ও তাঁর পরিবারকে তিরস্কার করা হয়। ধর্ষণের অভিযোগ ওঠা ব্যক্তিকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তবে এ সিদ্ধান্ত না মেনে ওই নারী ও তাঁর মেয়ে সালিস থেকে চলে আসেন। পরে ওই নারী বাদী হয়ে গত বুধবার মান্দা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণের মামলা করেন।
ওই নারীর মেয়ে বলেন, ‘সালিসের সিদ্ধান্ত না মেনে মামলা করায় ওই ব্যক্তির পক্ষ নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান মামলা তুলে নিতে চাপ দিচ্ছেন। আমাদের এলাকাছাড়া করার ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমার বাবা দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে অন্যত্র থাকে। স্বামী আমাকে ছেড়ে চলে গেছেন। বাড়িতে আমি, আমার নাবালক ছেলে আর মা বাড়িতে থাকি। আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
ধর্ষণের অভিযোগ ওঠা ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।
ধর্ষণের ঘটনা সালিসে মীমাংসার চেষ্টা এবং গৃহবধূ ও তাঁর পরিবারকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে এলাকায় অনেক হইচই হচ্ছিল। ঘটনাটি জানার জন্য গৃহবধূ, অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং তাঁদের পরিবারকে আমি ইউনিয়ন পরিষদে ডেকেছিলাম। সেখানে কোনো সালিস বৈঠক হয়নি কিংবা কাউকে জরিমানাও করা হয়নি। বরং ঘটনা জানার পর আমি গৃহবধূকে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি। মামলা তুলে নেওয়ার হুমকির অভিযোগ সত্য নয়।’
এ ব্যাপারে মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ওই নারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিবেদন এখনো আসেনি। আসামি পলাতক। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া ধর্ষণের ঘটনা সালিসে মীমাংসার চেষ্টা ও মামলা তুলে নিতে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে ওই নারীর মেয়ে থানায় একটি অভিযোগ করেছেন। অভিযোগটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।