সাড়ে ৩ মাসে অর্জন ৪০%

সরকারিভাবে ধানের যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে তার চেয়ে বেশি দামে ধান বেচাকেনা হচ্ছে।

সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে হাটবাজারগুলোতে ধানের দাম বেশি। এর ফলে খুলনা জেলায় সরকারি ন্যায্যমূল্যে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অনেক পিছিয়ে রয়েছে। সাড়ে তিন মাসে লক্ষ্যমাত্রার ৪০ শতাংশের কম ধান সংগৃহীত হয়েছে। তবে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯০ শতাংশ চাল সংগ্রহ হয়ে গেছে। আগামী সপ্তাহে শেষ হচ্ছে এই সংগ্রহ অভিযান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারিভাবে ধানের যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে তার চেয়ে বেশি দামে ধান বেচাকেনা হচ্ছে। এ ছাড়া সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে গেলে অনেক ঝক্কিঝামেলায় পড়তে হয়। গুদামসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ধানের আর্দ্রতা পরীক্ষা করে সরকারি নির্দেশনামতো হলে তারপর ধান কিনে থাকেন। এ ছাড়া পরিবহন খরচ আছে, যথেষ্ট সময় ব্যয়ও হয়। এবার মৌসুমের শুরুতে ভালো দাম পাওয়ায় প্রথম দিকেই কৃষকেরা ধান বিক্রি করে দিয়েছেন। এসব কারণে খাদ্যগুদামে ধান দিতে আগ্রহ কমায় সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্ধেকও পূরণ হয়নি। খুলনায় গত ২৬ এপ্রিল থেকে ধান সংগ্রহ ও ৫ মে থেকে চাল কেনা অভিযান শুরু হয়। ১৬ আগস্ট পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে।

খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, কৃষকেরা বাজারে সরকার নির্ধারিত দামেই ধান দিতে পারছেন, কোথাও আরও বেশি দামে বিক্রি করতে পারছেন। এ জন্য কৃষকেরা ধান দিচ্ছেন না। চাল সংগ্রহের জন্য মিলারদের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে।

জেলায় বোরো ধানের সবচেয়ে বেশি আবাদ হয় ডুমুরিয়ায়। এ উপজেলার টিপনা গ্রামের তরুণ কৃষক শেখ মঞ্জুর রহমান এ বছর ২০ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছিলেন। তিনি মোট ৬০০ মণ ধান পেয়েছেন। প্রথম অবস্থাতেই ১ হাজার ১৭০ টাকা দরে ৫০০ মণ ধান স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন। বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় সরকারি গুদামে ধান বিক্রিতে তাঁর কোনো আগ্রহ ছিল না।

বটিয়াঘাটার খলসিবুনিয়া গ্রামের কৃষক পবিত্র রায় বলেন, ‘সরকারি গোডাউনে ধান দিতি গেইলি ধান একেবারে শুকান লাগে, আবার ধান ফেরত দেয়। টাকা তোলাতে নানা ঝামেলা। আর হাটে ধান বেইচতে অত ঝামেলা নাই। এবার হাটে প্রতি মণ ১ হাজার ১০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা পর্যন্ত দাম পাওয়া যাচ্ছে।’

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর সূত্র জানায়, চলতি বোরো সংগ্রহ মৌসুমে জেলার ৯টি গুদামে কৃষকের কাছ থেকে ৮ হাজার ৯৫৭ মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। জেলার নয়টি উপজেলার মধ্যে ডুমুরিয়া, ফুলতলা ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় কৃষি অ্যাপের মাধ্যমে ও অপর ছয়টি উপজেলায় ‘আগে আসলে আগে পাবেন’ ভিত্তিতে ধান কেনা হয়েছে। এ ছাড়া জেলায় ১৭ হাজার ৫২২ মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল ও ১ হাজার ৭৯৫ মেট্রিক টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেদ্ধ চাল সংগ্রহের জন্য ১৩৬টি ও আতপ চাল সংগ্রহের জন্য ৭০টি মিলের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। সেদ্ধ চাল ৪০ টাকা, আতপ চাল ৩৯ টাকা ও ধান ২৭ টাকা কেজি দরে কেনা হচ্ছে।

* মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলায় ৩ হাজার ৪৮৮ মেট্রিক টন ধান কেনা হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩৯ শতাংশ। * সেদ্ধ ও আতপ চাল কেনা ১৭ হাজার ১৪২ মেট্রিক টন যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯০ শতাংশ।

গত মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলায় ৩ হাজার ৪৮৮ মেট্রিক টন ধান কেনা হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩৯ শতাংশ। আর সেদ্ধ চাল কেনা হয়েছে ১৬ হাজার ২৭২ মেট্রিক টন ও আতপ চাল কেনা হয়েছে ৮৭০ মেট্রিক টন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনা কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলায় এবার বোরো ধানের চাষ হয় ৬০ হাজার ১৫৭ হেক্টর জমিতে। উৎপাদিত হয়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার ৭০৮ মেট্রিক টন ধান। তবে সরকারিভাবে কেনা হচ্ছে ৮ হাজার ৯৫৭ মেট্রিক টন ধান। অর্থাৎ মোট উৎপাদনের মাত্র ২ দশমিক ৩১ শতাংশ ধান কেনার লক্ষ্য ছিল।

খুলনা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তফা কামাল হোসেন বলেন, যেসব মিলার প্রথম দিকে ধান কিনতে পারেননি, তাঁরা কিছুটা লোকসানে চাল দিচ্ছেন। তবে সরকার নির্ধারিত চালের দাম মোটামুটি ভালো থাকায় খুলনার বেশির ভাগ মিলার এবার গুদামে চাল দিয়েছেন।

খুলনা জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ বাবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ধান দেওয়ার জন্য কৃষকদের ফোনও করা হয়েছে। তবে সরকারিভাবে ধানের যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে তার চেয়ে বেশি দামে ধান বেচাকেনা হচ্ছে। এ কারণে খাদ্যগুদামে ধান সরবরাহ করতে কৃষকেরা আগ্রহী হচ্ছেন না। নির্ধারিত সময়ে চাল সংগ্রহ হয়ে যাবে, তবে ধান সংগ্রহ হয়তো সম্ভব হবে না।