সাড়ে ৬ ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে মাহাদির মাথার হাড় প্রতিস্থাপন

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সোমবার অস্ত্রোপচারের পর মাহাদি জে আকিব
ছবি: সংগৃহীত

ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে আহত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) ছাত্র মাহাদি জে আকিবের মাথার হাড় প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। আজ সোমবার প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা ধরে চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগে তাঁর এই দ্বিতীয় দফার অস্ত্রোপচার হয়।

এর আগে গত বছরের ৩০ অক্টোবর প্রথম অস্ত্রোপচারের সময় মাহাদির মাথার হাড়ের একটি অংশ খুলে তাঁর পেটের চামড়ার নিচে রাখা হয়েছিল। প্রায় পাঁচ মাস পর সেই হাড় পুনরায় পেট থেকে বের করে মাথায় প্রতিস্থাপন করা হলো।

আজ অস্ত্রোপচারে নেতৃত্ব দেন নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক নোমান খালেদ চৌধুরী। তাঁকে সহযোগিতা করে নিউরোসার্জারি ও অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী মিলিয়ে ১৫ জনের একটি দল।

অধ্যাপক নোমান খালেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকাল ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত অস্ত্রোপচার করেছি। সফলভাবে তার হাড় প্রতিস্থাপন করেছি। অস্ত্রোপচারের পর মাহাদির জ্ঞান ফিরেছে। সে কমান্ড (নির্দেশ) অনুযায়ী সবকিছু করতে পারছে। তারপরও পর্যবেক্ষণের জন্য তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে।’

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, অস্ত্রোপচারের সময় দুটি দলে চিকিৎসকেরা ভাগ হয়ে যান। এর মধ্যে একটি পক্ষের কাজ ছিল পেটের চামড়ার নিচ থেকে হাড়টি বের করে আনা। এই দলের দায়িত্বে ছিলেন নিউরোসার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মাহফুজুল কাদের। মাথায় প্রতিস্থাপনসহ পুরো অস্ত্রোপচারের নেতৃত্বে ছিলেন নোমান খালেদ চৌধুরী। এ ছাড়া নিউরোসার্জারি বিভাগের অপর দুই সহকারী অধ্যাপক সাইফুল আলম ও মো. সানাউল্লাহ অস্ত্রোপচারকারী দলের সঙ্গে ছিলেন।

অস্ত্রোপচার শেষে মাহাদি জে আকিবের জ্ঞান ফেরার পর তাঁর সঙ্গে চিকিৎসকেরা কথা বলেন। চমেক অধ্যক্ষ সাহেনা আক্তার ও হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান মাহাদিকে দেখতে যান। এখন কয়েক দিন তাঁকে হাসপাতালে থাকতে হবে।

মাহাদি জে আকিবের বাবা স্কুলশিক্ষক গোলাম ফারুক মজুমদার হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কক্ষের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। ছেলের দ্রুত আরোগ্যের জন্য সবার কাছে দোয়া চান তিনি।

গত বছরের ২৯ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রধান ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মারামারিতে কয়েকজন আহত হন। ছাত্রলীগের এক পক্ষ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী এবং অপরটি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর সমর্থক। রাতের ঘটনার জের ধরে ৩০ অক্টোবর দুপুরে মাহাদি জে আকিবের ওপর হামলা হয়। ঘটনার পর কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল।

হামলায় মাহাদির মাথায় গুরুতর জখম হয়। তখন অস্ত্রোপচার করে তাঁর মাথার হাড়ের অংশটি পেটের চামড়ার নিচে রাখা হয়। এ সময় তাঁর মাথা সাদা ব্যান্ডেজে মোড়ানো ছিল। তাতে লেখা ছিল ‘হাড় নেই, চাপ দেবেন না’। এই ছবি তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। প্রথম অস্ত্রোপচারের পর মাহাদি গত বছরের ১৮ নভেম্বর বাড়ি ফেরেন। বাড়ি থেকে এসে গত মাসে কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। ২ মার্চ অস্ত্রোপচারের জন্য আবার হাসপাতালে ভর্তি হন মাহাদি।

আরও পড়ুন