সিনহা হত্যা মামলার দ্বিতীয় দফায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আজ রোববার সকাল সোয়া ১০টা থেকে শুরু হয়েছে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার দ্বিতীয় দফার সাক্ষ্য গ্রহণ। প্রথমে ঘটনার সাক্ষ্য দিচ্ছেন মামলার ৩ নম্বর সাক্ষী টেকনাফের মিনাবাজার এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী। সাক্ষ্য শেষ হলে তাঁকে জেরা করবেন আসামিপক্ষের অন্তত ১২ জন আইনজীবী।
৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে দ্বিতীয় দফার এই সাক্ষ্য গ্রহণ। এই ৪ দিনে অন্তত ১৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ হতে পারে। মামলার মোট সাক্ষী ৮৩ জন।
এর আগে প্রথম দফায় ৩ দিনে (২৩-২৫ আগস্ট) আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন মামলার বাদী ও সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস এবং ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী ও ২ নম্বর সাক্ষী সাহেদুল ইসলাম সিফাত। তবে তাঁদের কেউ আজ রোববার আদালতে উপস্থিত নেই।
আজ সকাল সাড়ে নয়টায় কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে জেলা কারাগার থেকে প্রিজন ভ্যানে করে আদালত প্রাঙ্গণে আনা হয় সিনহা হত্যা মামলার অন্যতম আসামি বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ১৫ জনকে। এর আগে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে গণমাধ্যমকর্মী ও লোকজনকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। ছবি তুলতে বাধা দেওয়া হয়। কয়েকজনের মুঠোফোনও কেড়ে নেওয়া হয়।
প্রথম দফার সাক্ষ্য গ্রহণের সময় ২৪ আগস্ট আদালতের কাঠগড়ায় বসে মুঠোফোনে কথা বলেন মামলার অন্যতম আসামি প্রদীপ কুমার দাশ। এ ঘটনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার এবং মুঠোফোনে প্রদীপের কথা বলার ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপর দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগে তিন পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়। ঘটনা তদন্তে গঠন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি।
আজ সকাল পৌনে ১০টার আগে সব আসামিকে আদালতে নেওয়া হয়। এর আগে আদালতে উপস্থিত হন মামলার ৩ নম্বর সাক্ষী টেকনাফের মিনাবাজার এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলীসহ আরও কয়েকজন। সকাল সোয়া ১০টায় তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও আদালতের পিপি ফরিদুল আলম জবানবন্দি নেন। আদালত পরিচালনা করছেন জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি (টেকনাফে দুটি ও রামুতে একটি) মামলা করে। পুলিশের মামলায় সিনহার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাতকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর সিনহা যেখানে ছিলেন, হিমছড়ির নীলিমা রিসোর্টে ঢুকে তাঁর ভিডিও দলের দুই সদস্য শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নুরকেও আটক করে পুলিশ। পরে নুরকে ছেড়ে দিলেও শিপ্রা ও সিফাতকে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। পরে তাঁরা জামিনে মুক্তি পান।
ঘটনার পাঁচ দিন পর ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। চারটি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব। ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম। গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে বরখাস্ত ওসি প্রদীপ ও বরখাস্ত কনস্টেবল রুবেল শর্মা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি।