সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলো প্রস্তুত, নিরাপত্তায় সচেষ্ট প্রশাসন
সিলেটের নাম শুনলেই পাহাড়, টিলাবেষ্টিত চা-বাগান, সঙ্গে সাদা পাথর ও জাফলংয়ে স্বচ্ছ পানি চোখে ভেসে ওঠে পর্যটকদের। এ ছাড়া রাতারগুলের প্রকৃতি, জাফলংয়ে মায়াবী ঝরনা, আর নীল পানির নদ লালাখাল তো রয়েছেই। জাফলং, সাদা পাথর, বিছানাকান্দি, রাতারগুল, পান্তুমাই, চা-বাগান, বিভিন্ন পাহাড়, ঝরনা স্পটে বছরের সব সময়ই পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। তবে পর্যটনকেন্দ্রগুলো বর্ষা মৌসুমেই স্বরূপে ফিরে আসে। মেলে ধরে নিজেদের সৌন্দর্য। এ ছাড়া শাহজালাল (রহ.) এবং শাহপরান (রহ.) মাজারেও পর্যটকদের ভিড় জমে।
গত দুই বছর ধরে করোনা পরিস্থিতির কারণে ঈদ–পরবর্তী পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল না সিলেটের এসব পর্যটনকেন্দ্রে। তবে এবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ঈদ–পরবর্তী সময়ে পর্যটকদের সমাগম বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা। পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। ঈদের ছুটিতে পর্যটকেরা ঘুরতে এসে যাতে হয়রানি বা কোনো দুর্ঘটনার শিকার না হন, এ জন্য নেওয়া হয়েছে নজরদারির ব্যবস্থা। এ জন্য প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর থাকবেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জেলা পুলিশ এরই মধ্যে সিলেটের ১০টি পর্যটনকেন্দ্র ও জনসমাগম কেন্দ্র চিহ্নিত করেছে। এসব কেন্দ্রে টুরিস্ট পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি করা হবে। এ ছাড়া সাদা পোশাকেও গোয়েন্দা পুলিশ নিযুক্ত থাকবে।
সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (জেলা বিশেষ শাখা ও গণমাধ্যম) মো. লুৎফর রহমান বলেন, সিলেটের পুলিশ সুপার ঈদে পর্যটকদের হয়রানি কমাতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন। এর মধ্যে জনসমাগমস্থল চিহ্নিত করে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর, জাফলংয়ে জিরো পয়েন্ট এলাকাতেও পর্যটকদের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এসব এলাকা ভারত সীমান্তবর্তী হওয়ায় পর্যটকেরা ভুল করে যাতে ভারত সীমান্তের দিকে পা না বাড়ান, সে জন্য বিজিবির সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুশিকান্ত হাজং বলেন, নৌকা ভাড়া নির্ধারণ, হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের পর্যটকদের হয়রানি না করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঈদে বেড়াতে গিয়ে অনেকে পানিতে ডুবে ঈদের আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়। বিষয়গুলো মাথায় রেখে সাদা পাথরের বিপজ্জনক স্থানগুলোতে যাতে পর্যটকেরা না নামেন, সে জন্য লাল নিশানা টাঙিয়ে নিরাপত্তার জন্য স্বেচ্ছাসেবক, পুলিশ ও প্রশাসনের আলাদা দল গঠন করা হয়েছে। সাদা পাথরে সার্বক্ষণিক স্বেচ্ছাসেবক ডুবুরি দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া সব বিষয় নজরদারির জন্য প্রশাসনের আলাদা দল গঠন করা হয়েছে।
জাফলং সাব জোন টুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক রতন শেখ বলেন, এরই মধ্যে সিলেট অঞ্চলের টুরিস্ট পুলিশের সুপার আলতাফ হোসেনসহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল ইসলাম জাফলং পরিদর্শন করে দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন।
জৈন্তাপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিপামনি দেবী বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জৈন্তাপুরের পর্যটনকেন্দ্র লালাখালে প্রশাসনের নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সিলেট হোটেল-মোটেল রেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুমাত নুরী বলেন, ঈদ–পরবর্তী সময়ে সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রে ঘুরে বেড়াতে পর্যটকেরা আগেভাগেই বিভিন্ন হোটেল-মোটেল অগ্রিম বুকিং করে রেখেছেন। অনেকে আবার ঈদের ছুটি নিশ্চিত হওয়ার পর বুকিং করবেন বলে জানিয়ে রেখেছেন। এরই মধ্যে সিলেটের বিভিন্ন হোটেলে অর্ধেকের বেশি কক্ষ বুকিং করেছেন পর্যটকেরা। আশা করছেন ঈদের মৌসুমে পর্যটকদের উপস্থিতি আশানুরূপ হবে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সিলেট মহানগর ও জেলায় টুরিস্ট পুলিশ, জেলা পুলিশের সমন্বয়ে টহল দল বৃদ্ধিসহ বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর বাইরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদেরও (ইউএনও) সমন্বয় করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।