সিলেটের প্রবাসীরা বেকায়দায়

দেড় মাসের ব্যবধানে উড়োজাহাজের টিকিটের দাম বেড়ে যাওয়ায় বেকায়দায় পড়েছেন প্রায় ২০ হাজার প্রবাসী।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে বেসরকারি একটি পরিচ্ছন্নতাকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন সিলেটের বালাগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা শিপলু উদ্দিন। শিপলু গত নভেম্বরের প্রথম দিকে ৫৫ হাজার টাকার বিমানভাড়ায় দেশে এসেছিলেন। দেড় মাসের বেশি সময় দেশে থাকার পর এবার তাঁকে কর্মস্থলে ফিরতে হবে। গত ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে ফিরতি টিকিট করতে গিয়ে জানতে পারেন, ভাড়া ১ লাখ ৯ হাজার থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার হয়ে গেছে।

শিপলু বলেন, দেশে থাকার সময় টিকিটের কিছু টাকা রেখে বাকি টাকা খরচ করে ফেলেছেন। হঠাৎ ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় তিনি বেকায়দায় পড়েন। পরে তিনি অন্যদের সহযোগিতা নিয়ে টিকিট করেছেন।

নগরের চারটি ট্রাভেল এজেন্সিতে খবর নিয়ে জানা গেছে, শুধু সংযুক্ত আরব আমিরাতের নয়, গত দেড় মাসে কাতার, সৌদি আরব, আবুধাবি ও ইউরোপের দেশগুলোতে যাওয়ার বিমানভাড়া দুই থেকে আড়াই গুণ বেড়েছে। এতে বেকায়দায় পড়েছেন সিলেট অঞ্চলের প্রায় ২০ হাজার প্রবাসী।

এ অবস্থায় বিমানভাড়া হাতের নাগালে রাখাতে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সিলেটের ৮ ব্যক্তির পক্ষে আইনজীবী শিশির মনির প্রবাসীকল্যাণসচিব, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনসচিব, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) সভাপতি বরাবর আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন।

ট্রাভেল এজেন্সিগুলোতে খবর নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন দেশে করোনার নতুন ধরন অমিক্রনের সংক্রমণ বৃদ্ধির পর বিদেশগামী যাত্রীদের মধ্যে একধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। কখন কোন নিষেধাজ্ঞা আসে, সেটা ভেবে ভিসা পাওয়ার পরপরই অনেকে নিজ নিজ গন্তব্যে চলে যেতে চাচ্ছেন। এ ছাড়া আগামী ছয় মাস ঢাকার হজরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রাতে বিমান ওঠা-নামা বন্ধ ঘোষণা করায় ফ্লাইটের সংখ্যা কমে গেছে। এতে বিমানভাড়া বেড়েছে।

ট্রাভেল এজেন্সি সূত্র জানায়, গত নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ঢাকা থেকে দুবাই পর্যন্ত ৪৫ থেকে ৬০ হাজার টাকায় বিমানে আসা-যাওয়া করা যেত। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে সেটি বেড়ে এক লাখ টাকার ওপরে চলে গেছে। ঢাকা থেকে যুক্তরাজ্যের হিথরো বিমানবন্দর (লন্ডন) পর্যন্ত সর্বনিম্ন ভাড়া ছিল ৫৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা। ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে তা বেড়ে ১ লাখ ২০ থেকে ২ লাখ হয়ে যায়।

নগরের শাহজালাল উপশহর এলাকার বাসিন্দা সাইদ আহমদ বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে বিভিন্ন দেশ বিমান চলাচল বন্ধ করে দিতে পারে বলে আশঙ্কা আছে। সে জন্য সময়ক্ষেপণ না করেই যুক্তরাজ্যে চলে যেতে চাচ্ছেন। এ জন্য বাড়তি ভাড়া দিয়ে হলেও টিকিট করে ফেলেছেন।

জিন্দাবাজার এলাকার আতিয়া ট্রাভেলসের পরিচালক আদনান আহমেদ বলেন, যাত্রীদের মধ্যে একধরনের তাড়া আছে। নতুন ভিসা অনুমোদন করায় যাত্রীসংখ্যা বেড়েছে। তাই অনেকে বেশি ভাড়া দিয়ে টিকিট কাটছেন।

হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) যুগ্ম মহাসচিব জহিরুল কবির চৌধুরী বলেন, ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এখন রাত ১২টা থেকে ৮টা পর্যন্ত ফ্লাইট ওঠা-নামা বন্ধ। এ জন্য আগে যেখানে ২০-২৫টি ফ্লাইট যাওয়া-আসা করত সেটি কমিয়ে চার-পাঁচটি করা হয়েছে। এসব থেকে উত্তরণের জন্য সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জনবল বাড়িয়ে ফ্লাইটের পরিমাণ বাড়ানো প্রয়োজন। হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ও অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সিলেট অঞ্চলের চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন বলেন, বিষয়টি তাঁরা মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছেন, যাতে যাত্রীদের ওপর অতিরিক্ত ভাড়া চাপিয়ে দেওয়া না হয়।